বিয়ের কয়দিন পরে Husband আমাকে তার বুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরাতে নিয়ে গেলো. বুয়েট ঘুরে ঘুরে আমাকে সে দেখাতে লাগলো কোন বিল্ডিংএ সে ক্লাস করতো, কোথায় তার ল্যাব, কোথায় তার ক্যান্টিন। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে ও আমাকে এমই বিল্ডিংএর সামনে নিয়ে আসলো,আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, "দেখো অদ্রি, এই জায়গাটা থেকেই আমাকে টেনে হিঁচড়ে ওরা নিয়ে যায়! ১০-১২ জন ছাত্রলীগ নেতা মিলে কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে মাটিতে ফেলে শুরু করে কিল, ঘুষি, এলোপাথাড়ি লাত্থি! মারতে মারতে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় আরকির চিপায় নিয়ে যায়!" দেখলাম সেই জায়গা, যেই চিপাটাতে ওকে শুইয়ে প্রচন্ড জোরে মাথায় লাত্থি মারতে থাকে জানোয়ারের মতন। ভরদুপুরে পুরা ক্যাম্পাস ভর্তি স্টুডেন্ট এর সামনে ওকে মেরেছে। বাঁধা দেওয়া তো অনেক দূরের কথা, একটা স্টুডেন্টও টুঁ শব্দ টাও করে নাই! ওর এক বন্ধু বাঁচানোর একটু সাহস করতে গিয়ে নিজেই মার্ খেয়ে ফিরে আসে. শুনেছি করিডর থেকে বুয়েটের টিচার দেখেছে যে ওকে মেরে যাচ্ছে। চোখের সামনে ছেলেটাকে পিটিয়ে শেষ করে ফেলছে, এই প্রখর মেধাবীদের ভিড়ে একজনেরও বুকে পাটা নেই যে কেউ কিছু বলবে!
মারতে মারতে ওকে এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস থেকে রাস্তায় বের করে ফেলে! কুকুরের মতন রাস্তার মধ্যে মারতেই থাকে. শেষ পর্যন্ত পুলিশ আসলে, ওকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিলো। বললো আমার স্বামীর নামে যেন কড়া মামলা করা হয় এবং সে যেন কিছুতেই ছাড়া না পায়. Even পুলিশ স্টেশনে গিয়েও দানব গুলা ওকে মারতেই থাকে, to the point একজন পুলিশ এসে অনুরোধ করে বলে, "আচ্ছা মারতেছেন মারেন, কোমড়ের নিচে মারেন, এভাবে ছেলেটার মাথায় মাইরেন না." মায়া হচ্ছিলো,তার এভাবে মাথায় মারতে থাকলে হয়তো সে আর বাঁচবে না. আল্লাহ হায়াত রেখেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ আমার স্বামী বেঁচে ফিরতে পেরেছিল!
সারা শরীরের রক্তে মাখা এবং প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে একটু হুঁশ আসলে ওর মনে হলো নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। অবস্থা যেমনি হোক, নামাজ কাযা দেওয়া যাবে না! কোনোমতে অযু করে ঐভাবেই জেলের মধ্যে সে নামাজ পড়লো। ওদিকে আব্বা-আম্মা, বড় ভাই, ছোট ভাই, আপু - সবার পাগলের মতন অবস্থা! আব্বা ভাত নিয়ে সবে বসেছেন তখন ফোন আসলো। মুখের ভাত টাও খেতে পারেন নাই, ছুটে গিয়ে দেখেন পুলিশ স্টেশনে তার আদরের ছেলের কি অবস্থা করে রেখেছে! একটা বাবার তখন কেমন লাগে, সেটা তিনি ছাড়া কেউ বুঝবে না! আর আম্মার বুকফাঁটা কান্নার কথা নাহয় নাই বললাম! আল্লাহর রহমতে ওকে শেষ পর্যন্ত জেল থেকে বের করা গিয়েছিলো। কি হাস্যকর! কোনো কারণ ছাড়াই পিটিয়ে পিটিয়ে মৃতপ্রায় করে দিয়েছে যে মানুষটাকে তার নামেই আবার মামলা করা হচ্ছে- কেন? সে নাকি শিবিরের বড় নেতা! "শিবির" is the magic word - ব্যস এটাই তো লাইসেন্স টু কিল, শিবির হলেই সব অত্যাচার justified! সুবহানাল্লাহ!
ও জেল থেকে কোনোভাবে বেড়িয়ে তো আসলো। শারীরিক ব্যাথার সাথে সাথে লজ্জা, ক্ষোভ, দুঃখের যে মানসিক ব্যাথা - সেটা কিভাবে কমবে? এখানেই কিন্তু শেষ না! মেরে আধমরা করেও তারা ক্ষান্ত হয়নি. আমার হাজব্যান্ড কে বুয়েটে ঢুকতে দিতো না ছাত্রলীগের গুন্ডারা। ওকে দেখলেই তেড়ে মারতে আসতো। ক্লাস করতে দিতো না, বেসিকালি তারা ঠিক করে নিয়েছে আর ওকে বুয়েটে পড়াশোনা করতে দিবে না. এবং আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে - এই নিয়ে বুয়েটের প্রশাসনের কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই! আব্বা, বড় ভাইয়া - ছেলের জন্যে অনুরোধ করতে, যার কাছে পেরেছেন গিয়েছেন। কত মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছেন! "আমার ছেলেটাকে পড়াশোনা শেষ করতে দেওয়া হোক. বুয়েটের ভিসি পর্যন্ত তো তখন পৌঁছানোই যায়নি!! তখনকার DSW ছিল যে দেলোয়ার হোসেন, সে ঘটনা শুনে বলে - "এখানে আমার কিছু করার নেই!" উল্টা ভাবটা এমন যে দোষটা আমার স্বামীর! আল্লাহু আকবার! সেটাই তো! আমার স্বামীর এখানে অপরাধ কম নাকি ? সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে, কুরআন-হাদিসের স্টাডি সার্কেলে বসে, পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রদের দ্বীনের দাওয়াত দেয়. এতো বড় স্পর্ধা তার কোত্থেকে আসলো? তাকে ধরে মেরে পিটিয়ে, জেলে ভরে, তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হোক. এটাই উচিত শাস্তি! কি চমৎকার দেখা গেলো বুয়েট প্রশাসন! তোমাকে সালাম!
বুয়েটের কোনো টিচার আমার স্বামীর এই অসহায় অবস্থায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। হয়তো বলতে চেয়েও কিছু স্যারেরা কিছু বলতে পারেনা. ভরদুপুরে ক্যাম্পাস ভর্তি ছেলে-পিলের চোখের সামনে ওর সাথে এমন অন্যায় হয়েছে - কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে আসে নি! সবাইকে ছাত্রলীগ এমনই জিম্মা করে রেখেছে!
নয়টা মাস ওকে বুয়েটে ঢুকতে দেয়নি ছাত্রলীগ, নয়টা মাস ওকে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিদিন তড়পাতে হয়েছে। আমি কল্পনাও করতে পারি না কি পরিমাণ মানসিক, শারীরিক কষ্টের মধ্যে সে ছিল. আব্বা, আম্মা, ভাইয়া, আপুর কষ্ট চিন্তা করতেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না. অন্তরে ঈমান ছিল দেখেই হয়তো ও পাগল হয়ে যায় নাই! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আল্লাহ ওকে সুস্থ রেখেছেন! আলহামদুলিল্লাহ ও বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছে!
আমার স্বামীর সাথে এই ঘটনা ঘটেছে ৬ বছর আগে! ওই সময় ওর সাথে আরো ৬৫ জন বড়-ছোট ভাইকে এভবেই মেরে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে বুয়েটে! কত জনকে শেষ পর্যন্ত বুয়েটে আর পড়াশোনাই শেষ করতে দেয়নি! এদের একজনও কোনো বিচার পায়নি। আমার স্বামী কোনো বিচার পায়নি। একটা নির্যাতিত ভাইএর জন্যেও কেউ বলে নাই, "We want justice for you!" ২০ জন মিলে মারতে আসলে ২০০ জন মিলে তার প্রতিবাদ করলে কিভাবে ছাত্রলীগ সাহস পায় দিনে-দুপুরে কুকুরের মতন মানুষ পিটাতে? এরকম সাহস তো দানবেরা একদিনে পায়নি। একাডেমিয়া আমাদের বুদ্ধি আর পরিশ্রমের জোরে মেধাবী হতে শিখায়, ঈমানের জোরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখায় না!
ওকে যারা মেরেছিলো তারা বীরদর্পে বুয়েটে ঘুরে বেড়িয়েছি! আরো হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে ওকে attack করার সময় লিড দিয়েছে যেই পশু গুলা, তারাই এখন ওয়ালে লিখছে, "Justice for Abrar!" হাসবো না কাঁদবো? হিপোক্রিসির-ও একটা সীমা আছে!
আবরারকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। (আল্লাহ! তুমি আবরারকে জান্নাতুল ফেরদাউস এ দাখিল করো). ধরুন, আবরার যদি না মারা যেত, কোনোদিনও সে পত্রিকার শিরোনামে আসতো না. আমার স্বামীর মতন জাস্ট একটা নাম নিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকতো! যদি সিসিটিভির ফুটেজ না থাকতো, তাহলে শত হাজার লাশের মধ্যে তার লাশ গুম হয়ে যেত! জঙ্গি, শিবির ট্যাগ লাগিয়ে দিলেই তো হলো - ব্যস সব কিছু জাস্টিফাইড!
আমার হাজব্যান্ড সারাদিন ল্যাবে কাজ করে এসে বাসায় ঢুকে কাঁধের ব্যাগটা নামিয়েই রান্নাঘরে ঢুকে যায়. আমাকে পিঁয়াজ কেটে দিতে দিতে বলে, "যাও বিশ্রাম করো, সারাদিন অফিস করে এসেছো!" আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না - সুবহানাল্লাহ এই মানুষটাকে তোরা বলিস জঙ্গি? এরকম যে কত অসম্ভব ভালো মানুষদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দিয়েছে - কোনো হিসাব আছে?
এক সপ্তাহ প্রায় হতে চলেছে আবরারের মৃত্যুর। আমি এখনো রাতে ঘুমাতে পারি না. আবরারের জায়গায় আমার স্বামী থাকতে পারতো! আপনার আপন কেউ থাকতে পারতো। কি করতেন তখন?
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আবরারের মৃত্যুকে বৃথা যেতে দেন নাই. মানুষ জানুক "সেরা বিদ্যাপীঠ, সেরা বিদ্যাপীঠ" বলে বলে যারা অজ্ঞান - সেখানের প্রশাসনে কি পরিমান নোংরামি! মানুষ জানুক, এখানে ভারপ্রাপ্তরা কি পরিমান জালিম! বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির নামে যে অকথ্য বীভৎস অন্যায় এবং সেই অন্যায়ের প্রশ্রয় দেওয়া চলে - সেটা এখন কি দিয়ে লুকাবি তোরা? এই সমস্ত দানব দেরকে যারা নিজের হাতে বানায়, প্রশ্রয় দেয় - তাদের উলঙ্গ করে সবার সামনে নিয়ে আসা হোক! তারা ভাবছে সামান্য একটু দুনিয়ার ক্ষমতার বলে কি না কি তারা পেয়ে গেছে। তারা জানে না যে, আল্লাহর পাকড়াও কত কঠিন! কত ভয়ঙ্কর!
আবরারের হত্যা আমাদেরকে একটা জোরে ধাক্কা দিয়ে যাক! ইনশাআল্লাহ আবরার মরে গিয়েও জিতে গেলো। আমি দুয়া করি এবং আশা রাখি আবরারের কবরটা এখন জান্নাতের একটা টুকরা হয়ে আছে. কিন্তু আমার- আপনার কবরটা কেমন হবে?
শেষ দিবসের একটা আলামত হচ্ছে - মানুষ এমন ভাবে খুন হবে, যে victim খুন হচ্ছে সে জানবে না কেন তাকে খুন করা হচ্ছে এবং যে খুন করছে সেও জানবে না কেন সে খুন করছে! (মুসলিম শরীফের হাদিস). আল্লাহু আকবার! কিয়ামতের আর কত দেরি? যেই মুহূর্তে আমি মারা যাবো, সেই মুহূর্ত থেকেই আমার কিয়ামত শুরু! এই যে এমন গা শিউরে উঠা ঘটনাগুলি এসে আমাদের কিয়ামতের signs গুলা দেখিয়ে যায় - তারপরো তো ঠিক হবো না আমরা। নামাজ পড়বো না, হারাম সম্পর্ক ছাড়বো না, আল্লাহর কথা শুনবো না! কয়দিন খুব উত্তাপ থাকবে সবাই, বেশি থেকে বেশি মেইবি আর ১-২ মাস? এরপর যে যার লাইফে ফিরে যাবে। আবরারের কথা বেমালুম ভুলে যাবো আমরা। নিজেদের অবাধ্যতায় আমরা আবার ডুবে যাবো।
"মানুষের হিসাব নিকাশের সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে, অথচ তারা গাফিলতির মধ্যে বিমুখ হয়ে পড়ে রয়েছে।" [সূরাহ আম্বিয়া, আয়াত : ১]
"যালিমদের উপর আল্লাহর লানত.." (আল আরাফ, আয়াত : ৪৪)
"আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?" (সূরা আত-তীন, আয়াত : ৮)
বিয়ের কয়দিন পরে Husband আমাকে তার বুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরাতে নিয়ে গেলো. বুয়েট ঘুরে ঘুরে আমাকে সে দেখাতে লাগলো কোন বিল্ডিংএ সে ক্লাস করতো, কোথায় তার ল্যাব, কোথায় তার ক্যান্টিন। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে ও আমাকে এমই বিল্ডিংএর সামনে নিয়ে আসলো,আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, "দেখো অদ্রি, এই জায়গাটা থেকেই আমাকে টেনে হিঁচড়ে ওরা নিয়ে যায়! ১০-১২ জন ছাত্রলীগ নেতা মিলে কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে মাটিতে ফেলে শুরু করে কিল, ঘুষি, এলোপাথাড়ি লাত্থি! মারতে মারতে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় আরকির চিপায় নিয়ে যায়!" দেখলাম সেই জায়গা, যেই চিপাটাতে ওকে শুইয়ে প্রচন্ড জোরে মাথায় লাত্থি মারতে থাকে জানোয়ারের মতন। ভরদুপুরে পুরা ক্যাম্পাস ভর্তি স্টুডেন্ট এর সামনে ওকে মেরেছে। বাঁধা দেওয়া তো অনেক দূরের কথা, একটা স্টুডেন্টও টুঁ শব্দ টাও করে নাই! ওর এক বন্ধু বাঁচানোর একটু সাহস করতে গিয়ে নিজেই মার্ খেয়ে ফিরে আসে. শুনেছি করিডর থেকে বুয়েটের টিচার দেখেছে যে ওকে মেরে যাচ্ছে। চোখের সামনে ছেলেটাকে পিটিয়ে শেষ করে ফেলছে, এই প্রখর মেধাবীদের ভিড়ে একজনেরও বুকে পাটা নেই যে কেউ কিছু বলবে!
মারতে মারতে ওকে এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস থেকে রাস্তায় বের করে ফেলে! কুকুরের মতন রাস্তার মধ্যে মারতেই থাকে. শেষ পর্যন্ত পুলিশ আসলে, ওকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিলো। বললো আমার স্বামীর নামে যেন কড়া মামলা করা হয় এবং সে যেন কিছুতেই ছাড়া না পায়. Even পুলিশ স্টেশনে গিয়েও দানব গুলা ওকে মারতেই থাকে, to the point একজন পুলিশ এসে অনুরোধ করে বলে, "আচ্ছা মারতেছেন মারেন, কোমড়ের নিচে মারেন, এভাবে ছেলেটার মাথায় মাইরেন না." মায়া হচ্ছিলো,তার এভাবে মাথায় মারতে থাকলে হয়তো সে আর বাঁচবে না. আল্লাহ হায়াত রেখেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ আমার স্বামী বেঁচে ফিরতে পেরেছিল!
সারা শরীরের রক্তে মাখা এবং প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে একটু হুঁশ আসলে ওর মনে হলো নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। অবস্থা যেমনি হোক, নামাজ কাযা দেওয়া যাবে না! কোনোমতে অযু করে ঐভাবেই জেলের মধ্যে সে নামাজ পড়লো। ওদিকে আব্বা-আম্মা, বড় ভাই, ছোট ভাই, আপু - সবার পাগলের মতন অবস্থা! আব্বা ভাত নিয়ে সবে বসেছেন তখন ফোন আসলো। মুখের ভাত টাও খেতে পারেন নাই, ছুটে গিয়ে দেখেন পুলিশ স্টেশনে তার আদরের ছেলের কি অবস্থা করে রেখেছে! একটা বাবার তখন কেমন লাগে, সেটা তিনি ছাড়া কেউ বুঝবে না! আর আম্মার বুকফাঁটা কান্নার কথা নাহয় নাই বললাম! আল্লাহর রহমতে ওকে শেষ পর্যন্ত জেল থেকে বের করা গিয়েছিলো। কি হাস্যকর! কোনো কারণ ছাড়াই পিটিয়ে পিটিয়ে মৃতপ্রায় করে দিয়েছে যে মানুষটাকে তার নামেই আবার মামলা করা হচ্ছে- কেন? সে নাকি শিবিরের বড় নেতা! "শিবির" is the magic word - ব্যস এটাই তো লাইসেন্স টু কিল, শিবির হলেই সব অত্যাচার justified! সুবহানাল্লাহ!
ও জেল থেকে কোনোভাবে বেড়িয়ে তো আসলো। শারীরিক ব্যাথার সাথে সাথে লজ্জা, ক্ষোভ, দুঃখের যে মানসিক ব্যাথা - সেটা কিভাবে কমবে? এখানেই কিন্তু শেষ না! মেরে আধমরা করেও তারা ক্ষান্ত হয়নি. আমার হাজব্যান্ড কে বুয়েটে ঢুকতে দিতো না ছাত্রলীগের গুন্ডারা। ওকে দেখলেই তেড়ে মারতে আসতো। ক্লাস করতে দিতো না, বেসিকালি তারা ঠিক করে নিয়েছে আর ওকে বুয়েটে পড়াশোনা করতে দিবে না. এবং আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে - এই নিয়ে বুয়েটের প্রশাসনের কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই! আব্বা, বড় ভাইয়া - ছেলের জন্যে অনুরোধ করতে, যার কাছে পেরেছেন গিয়েছেন। কত মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছেন! "আমার ছেলেটাকে পড়াশোনা শেষ করতে দেওয়া হোক. বুয়েটের ভিসি পর্যন্ত তো তখন পৌঁছানোই যায়নি!! তখনকার DSW ছিল যে দেলোয়ার হোসেন, সে ঘটনা শুনে বলে - "এখানে আমার কিছু করার নেই!" উল্টা ভাবটা এমন যে দোষটা আমার স্বামীর! আল্লাহু আকবার! সেটাই তো! আমার স্বামীর এখানে অপরাধ কম নাকি ? সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে, কুরআন-হাদিসের স্টাডি সার্কেলে বসে, পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছাত্রদের দ্বীনের দাওয়াত দেয়. এতো বড় স্পর্ধা তার কোত্থেকে আসলো? তাকে ধরে মেরে পিটিয়ে, জেলে ভরে, তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হোক. এটাই উচিত শাস্তি! কি চমৎকার দেখা গেলো বুয়েট প্রশাসন! তোমাকে সালাম!
বুয়েটের কোনো টিচার আমার স্বামীর এই অসহায় অবস্থায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। হয়তো বলতে চেয়েও কিছু স্যারেরা কিছু বলতে পারেনা. ভরদুপুরে ক্যাম্পাস ভর্তি ছেলে-পিলের চোখের সামনে ওর সাথে এমন অন্যায় হয়েছে - কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে আসে নি! সবাইকে ছাত্রলীগ এমনই জিম্মা করে রেখেছে!
নয়টা মাস ওকে বুয়েটে ঢুকতে দেয়নি ছাত্রলীগ, নয়টা মাস ওকে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিদিন তড়পাতে হয়েছে। আমি কল্পনাও করতে পারি না কি পরিমাণ মানসিক, শারীরিক কষ্টের মধ্যে সে ছিল. আব্বা, আম্মা, ভাইয়া, আপুর কষ্ট চিন্তা করতেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না. অন্তরে ঈমান ছিল দেখেই হয়তো ও পাগল হয়ে যায় নাই! আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আল্লাহ ওকে সুস্থ রেখেছেন! আলহামদুলিল্লাহ ও বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছে!
আমার স্বামীর সাথে এই ঘটনা ঘটেছে ৬ বছর আগে! ওই সময় ওর সাথে আরো ৬৫ জন বড়-ছোট ভাইকে এভবেই মেরে মেরে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে বুয়েটে! কত জনকে শেষ পর্যন্ত বুয়েটে আর পড়াশোনাই শেষ করতে দেয়নি! এদের একজনও কোনো বিচার পায়নি। আমার স্বামী কোনো বিচার পায়নি। একটা নির্যাতিত ভাইএর জন্যেও কেউ বলে নাই, "We want justice for you!" ২০ জন মিলে মারতে আসলে ২০০ জন মিলে তার প্রতিবাদ করলে কিভাবে ছাত্রলীগ সাহস পায় দিনে-দুপুরে কুকুরের মতন মানুষ পিটাতে? এরকম সাহস তো দানবেরা একদিনে পায়নি। একাডেমিয়া আমাদের বুদ্ধি আর পরিশ্রমের জোরে মেধাবী হতে শিখায়, ঈমানের জোরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখায় না!
ওকে যারা মেরেছিলো তারা বীরদর্পে বুয়েটে ঘুরে বেড়িয়েছি! আরো হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে ওকে attack করার সময় লিড দিয়েছে যেই পশু গুলা, তারাই এখন ওয়ালে লিখছে, "Justice for Abrar!" হাসবো না কাঁদবো? হিপোক্রিসির-ও একটা সীমা আছে!
আবরারকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। (আল্লাহ! তুমি আবরারকে জান্নাতুল ফেরদাউস এ দাখিল করো). ধরুন, আবরার যদি না মারা যেত, কোনোদিনও সে পত্রিকার শিরোনামে আসতো না. আমার স্বামীর মতন জাস্ট একটা নাম নিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকতো! যদি সিসিটিভির ফুটেজ না থাকতো, তাহলে শত হাজার লাশের মধ্যে তার লাশ গুম হয়ে যেত! জঙ্গি, শিবির ট্যাগ লাগিয়ে দিলেই তো হলো - ব্যস সব কিছু জাস্টিফাইড!
আমার হাজব্যান্ড সারাদিন ল্যাবে কাজ করে এসে বাসায় ঢুকে কাঁধের ব্যাগটা নামিয়েই রান্নাঘরে ঢুকে যায়. আমাকে পিঁয়াজ কেটে দিতে দিতে বলে, "যাও বিশ্রাম করো, সারাদিন অফিস করে এসেছো!" আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না - সুবহানাল্লাহ এই মানুষটাকে তোরা বলিস জঙ্গি? এরকম যে কত অসম্ভব ভালো মানুষদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দিয়েছে - কোনো হিসাব আছে?
এক সপ্তাহ প্রায় হতে চলেছে আবরারের মৃত্যুর। আমি এখনো রাতে ঘুমাতে পারি না. আবরারের জায়গায় আমার স্বামী থাকতে পারতো! আপনার আপন কেউ থাকতে পারতো। কি করতেন তখন?
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আবরারের মৃত্যুকে বৃথা যেতে দেন নাই. মানুষ জানুক "সেরা বিদ্যাপীঠ, সেরা বিদ্যাপীঠ" বলে বলে যারা অজ্ঞান - সেখানের প্রশাসনে কি পরিমান নোংরামি! মানুষ জানুক, এখানে ভারপ্রাপ্তরা কি পরিমান জালিম! বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির নামে যে অকথ্য বীভৎস অন্যায় এবং সেই অন্যায়ের প্রশ্রয় দেওয়া চলে - সেটা এখন কি দিয়ে লুকাবি তোরা? এই সমস্ত দানব দেরকে যারা নিজের হাতে বানায়, প্রশ্রয় দেয় - তাদের উলঙ্গ করে সবার সামনে নিয়ে আসা হোক! তারা ভাবছে সামান্য একটু দুনিয়ার ক্ষমতার বলে কি না কি তারা পেয়ে গেছে। তারা জানে না যে, আল্লাহর পাকড়াও কত কঠিন! কত ভয়ঙ্কর!
আবরারের হত্যা আমাদেরকে একটা জোরে ধাক্কা দিয়ে যাক! ইনশাআল্লাহ আবরার মরে গিয়েও জিতে গেলো। আমি দুয়া করি এবং আশা রাখি আবরারের কবরটা এখন জান্নাতের একটা টুকরা হয়ে আছে. কিন্তু আমার- আপনার কবরটা কেমন হবে?
শেষ দিবসের একটা আলামত হচ্ছে - মানুষ এমন ভাবে খুন হবে, যে victim খুন হচ্ছে সে জানবে না কেন তাকে খুন করা হচ্ছে এবং যে খুন করছে সেও জানবে না কেন সে খুন করছে! (মুসলিম শরীফের হাদিস). আল্লাহু আকবার! কিয়ামতের আর কত দেরি? যেই মুহূর্তে আমি মারা যাবো, সেই মুহূর্ত থেকেই আমার কিয়ামত শুরু! এই যে এমন গা শিউরে উঠা ঘটনাগুলি এসে আমাদের কিয়ামতের signs গুলা দেখিয়ে যায় - তারপরো তো ঠিক হবো না আমরা। নামাজ পড়বো না, হারাম সম্পর্ক ছাড়বো না, আল্লাহর কথা শুনবো না! কয়দিন খুব উত্তাপ থাকবে সবাই, বেশি থেকে বেশি মেইবি আর ১-২ মাস? এরপর যে যার লাইফে ফিরে যাবে। আবরারের কথা বেমালুম ভুলে যাবো আমরা। নিজেদের অবাধ্যতায় আমরা আবার ডুবে যাবো।
"মানুষের হিসাব নিকাশের সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে, অথচ তারা গাফিলতির মধ্যে বিমুখ হয়ে পড়ে রয়েছে।" [সূরাহ আম্বিয়া, আয়াত : ১]
"যালিমদের উপর আল্লাহর লানত.." (আল আরাফ, আয়াত : ৪৪)
"আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?" (সূরা আত-তীন, আয়াত : ৮)