BUET-Reports / anonymous-report

The goal of this repository is to collect anonymous reports from victims of BUET rags, tortures.
95 stars 19 forks source link

Git Reports Issue #201

Open BUET-Reports opened 4 years ago

BUET-Reports commented 4 years ago

Submitter: BUET Ahsan Ullah Hall torture

টর্চার

পলিটিক্যাল

(যার ঘটনা তার বলার সাহসটুকু নষ্ট হয়ে গেছে বিষণ্ণ এই পরিবেশে।)

"সেই ছেলেটাও হতে পারতো আবরার ফাহাদ"

ছেলেটা ছিলো আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। হলের বিভিন্ন খেলাধূলায়, ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতো সে খেলা-ধূলার সূত্র ধরেই হলের পলিটিকাল, নন পলিটিক্যাল প্রায় সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। সবার সাথেই হাস্যোজ্জ্বল কথা হতো দেখা হলেই। এদের অনেকেই অনলাইন অফলাইনে সুশীলতা দেখাতো। উপচে পড়া ভালোবাসা দেখাতো। এখনো, বুয়েটের এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সবাই এদের সুশীল, সুসভ্য ছাত্রলীগার মনে করে। ছেলেটাও তা-ই মনে করতো, ভাবতো এদের মন মানসিকতা, চিন্তা ধারা, নীতি অনেক উর্ধ্বে। সে ভাবতো, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যদি সত্যিকার অর্থে এই জামানায় কেউ ধারন করে, তাহলে এই উন্নত মানসিকতার বন্ধু ,বড় ভাইয়েরাই করে। একজনের তো ফেসবুক প্রফাইলে তো ঝুলানো আছে ‘’বোকাসোকা ধরনের, যুগের সাথে চলে না, মুক্তিযুদ্ধ-মৌলবাদী একজন ছেলে’’।

কিন্তু এই বোকাসোকা, যুগের সাথে না চলা, মুক্তিযুদ্ধ মৌলবাদী বন্ধুর রুদ্ররুপ কতটা উত্তাপ ছড়ায় তা ছেলেটার ধারণার বাইরে ছিলো।

আর, আরেকজন ছিলো, খুবই শ্রদ্ধেয় বড় ভাই। যার কাভারে হয়তো এখনো লেখা আছে, "রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়ায় উচিত - বঙ্গবন্ধু’’। অথচ এই বড় ভাইটার পিশাচ রূপ যে কত টা বিষাক্ত, ছেলেটার কষ্মিনকালেও চিন্তা হয় নি।

২০১৮ সালের ৯ বা ১০ এপ্রিল। দেশ তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্নিকুণ্ডে উত্তপ্ত। ছেলেটা হাতিরপুলে টিউশন করাতে গেছে। ছোট বেলায় একদম গ্রামে বড় হওয়ায় ইলেকশনের আগের মিছিল, জনসভা দেখতে ভাল্লাগতো। টিউশনি শেষে ছেলেটা মনস্থির করলো শাহবাগ দিয়ে ঘুরে টিএসসি হয়ে হলে যাবে। টিএসসির এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ছেলে টা দেখলো, হাতে গোনা পনেরো কুড়ি জন মানুষ রাজু ভাস্কর্যের নীচে দাঁড়িয়ে আছে। শোনা গেল, কোটা আন্দোলনকারীর মূল নেতা যারা - সেই রাশেদ, নূর, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নানক সাহেবের সাথে বৈঠকের পর, সম্ভবত এক মাসের জন্য। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বাম নেতা কর্মী আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। যথারীতি মিডিয়ার সামনে একটা ব্রিফিং দেয়। ছেলে টা ওই সময় ভাস্কর্যের সামনেই দাঁড়িয়ে। সংখ্যা কম হওয়ার কারনে আর টিভি-পেপারে সম্প্রচারিত হওয়ার আনন্দে সেও ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো বেশ গম্ভীর মুখে। তখন প্রেস ব্রিফিং চলছিলো বাম দলের।পরবর্তীতে সকল টিভি কভারেজ, অনলাইন পোর্টালে নিউজ হয় - সেই ছেলে টা হয়ে যায় কোটা আন্দোলনকারী নেতা। অথচ, বুয়েটে পড়তে আসা সহজ সরল ছেলে টা কখনো কোন ধরনের ম্যাস মুভমেন্টে যায়ও নি, যদিও সে অনেক সাধারন মানুষের মতো বঙ্গবন্ধু কে হৃদয়ে ধারন করে।

রাত দশ টা। ছেলে টা ফিরলো হলে। সাথেসাথেই তার সাবেক রুমমেট, আদরের এক ছোট ভাই, পরবর্তীতে বুয়েট ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা, ফোন দিয়ে জানায়, "ভাই, আপনাকে "বড়" ভাই ডাকে। গেলাম সেই "বড়" ভাইয়ের রুমে। রুমে ঢুকা মাত্রই সেই অতি নীতিবান সেই "বড়" ভাই বলে, "ফোন-ল্যাপটপ নিয়ে আয়"

ছেলে টা এই চেহারা দেখে কেপে উঠলো, দ্রুত কাঁপা কাঁপা হাতে ল্যাপটপ আর ফোন ওদের দিয়ে দিলো। এরপর, শুরু হয় ইন্টারোগেশন, সেই রাতের কথা ছেলে টা কখনো ভুলতে পারবে কিনা, বিধাতাই জানেন। সেই রাতের কথা মনে পড়লে ভয়ে শিউরে ওঠে এখনো সেই ছেলে টা। বাইরে থেকে হঠাৎ ২০১১ ব্যাচের "আহসান" বাংলা সিনেমার নায়কের মত উড়ে এসেই লাথি, কিল ঘুষি মারা শুরু করলো। সেই সাথে সজোরে কেউ একজন তল পেটে কিল দিলো। আর চলছিলো অশ্রাব্য সব গালিগালাজ!

ছেলেটার ফোন, ল্যাপটপে ঠিক আবরারের ল্যাপটপ যেভাবে খোঁজা হয়েছিলো, সেভাবেই তারা অনুসন্ধান অভিযান শুরু করলো। যে করেই হোক তাকে শিবির বানাতে হবে। আর এদিকে "আহসান" ক্লান্ত হলে শুরু হলো সেই প্রথম "বড়" ভাইয়ের পালা। তার সর্বশক্তির কিল ঘুষি, লাথি সেই ক্ষীণকায় ছেলেটা কিভাবে সেদিন সহ্য করেছে তা হয়তো সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবে। হঠাৎ সেই "বড়" ভাই হাতের জ্বলন্ত সিগারেট টা দিয়ে ছেলে টাকে ছ্যাকা মারতে গিয়ে থেমে গেলো, প্রচন্ড ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

গেটের বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে, আর রুমের মধ্যে তাদের শিবির প্রমাণের প্রাণান্তকর চেষ্টা।কোনরকম স্বীকারোক্তি পেলেই পুলিশের হাতে তুলে দিবে তারা ছেলেটাকে।

ভয়ে, ব্যাথায় আর অজানা শংকায় দূর্বল সেই ছেলেটাকে হিসহিসিয়ে বলছে, তুই 'ট্রেইন্ড শিবির', ‘কোটা আন্দোলনের নেতা’, স্বীকার যা! হলে আর কে কে শিবির এখনি স্বীকার যা! না হলে তোকে এই ঘরে বন্দি করে রাখব। "আহসান" বলে, ‘এই গুলারে শায়েস্তা করার জন্য আউল্লায় একটা স্পেশাল রুম রাখা লাগবে। যেখানে নিয়ে আরাম করে টর্চার করা যায়’’। বারবার মার খাওয়ার পরও ছেলেটা কাদছে না, তার সেই বোধটাও অবশ হয়ে গেছে। সে কাদে না দেখে "আহসান" গালি দিয়ে বল্লো, ‘তুই অবশ্যই ট্রেইনড। তোর মধ্যে শিবিরের সব বৈশিষ্ট্য আছে’! তার ব্যাচমেট "নিলয় দাস" বলে, "ভাই, এইটারে জুনিয়রদের হাতে ছেড়ে দেন।"

(ছেলেটার পরনে লুংগি ছিল।এলোপাথাড়ি লাথি আর কিলঘুষিতে কতবার পরনের লুংগি খুলে গিয়েছিল রাত সাড়ে দশটা থেকে ভোর পর্যন্ত সেই রাতে,তার হিসেব নাই।)

সেই "বড়" ভাই বা "আহসান" জুনিয়রদের হাতে ছেড়ে দেয় না তাকে। আরো খেলতে চায়।

সিনিয়র গুলো বাইরে গিয়ে শলা পরামর্শ করে। এবার ব্যাচমেট দের পালা। তার ই ব্যাচের এক হর্তাকর্তা নেতা সাথে একই ব্যাচের "আবির বিন্দু", "নিলয় দাস", "দিব্য মন্ডল", "দীপ্ত আকাশ রয়" এর কাছে সেই ছেলে টা। তাদের ব্যাচমেট। এরা প্রত্যেকেই ছেলে টার বেশ ভালো বন্ধু ছিল। তার ব্যাচের সেই নেতা ল্যাপটপ আবার চেক করে। আর বলে উঠে, "কিছু পাই নাই" - তার কন্ঠে একটু মায়া ছিলো হয়তো। একটু হয়তো সমবেদনা ছিলো যদিও তার কিচ্ছু করার ছিল না এবং পরে সেই ছেলে টা তার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করলে সে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায় সেদিনে নির্মম ঘটনার জন্য (এজন্য তার নাম ডিসক্লোজ করা হয়নি)

এরই মাঝে "নিলয় দাস" ছেলেটার একটা লাইক পায় একটা বিশেষ পোস্টে একটা জনপ্রিয় বুয়েট গ্রুপে। সেই কমেন্ট টি ছিলোঃ "বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চাইছিল যেই মতিয়া চৌধুরী সে এখন আওয়ামীলীগের নেতা।"

অমনি সাথে সাথেই আবেগী, নীতিবান "আবির বিন্দু" কলার চেপে ধরে ছেলেটার আর "নিলয় দাস" লাথি, ঘুষি চালাতে থাকে।

তারা নিষ্ঠুর গলায় গালি দিয়ে বলে উঠে, "তুই বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর কথা কস!"

অথচ সে শুধুই কমেন্টে লাইক দিয়েছিলো আর কমেন্ট টা কি প্রসঙ্গে করা হয়েছিলো সেই ক্ষমতার লোভে অন্ধ ছেলেগুলোর দেখার কথাও না।

এরপর চলে আরেক প্রস্থ ইন্টারোগেশন। এর যেনো কোনো শেষ নেই, অনন্তকাল চলতেই থাকবে। ছেলেটা পা ধরে, ক্ষমা চায়, আর অসহায় কন্ঠে আর্তি জানায়, "আমি শিবির না! আমি কোটা আন্দোলনের নেতা না!"

"দীপ্ত আকাশ" আর "দিব্য মন্ডল" বারবার তাকে বলে "হারামজাদা!তুই শিবির! স্বীকার যা!"

সময় তখন ভোর পাঁচটা সম্ভবত। বাইরের খোলা আকাশটা একটু একটু ফর্সা হচ্ছে। শারীরিক আর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত সেই দূর্বল ছেলেটার কাছ থেকে ফোনে ভয়েস রেকর্ড নেয় তারা।

তাকে পরিষ্কার গলায় বলতে বলা হয়, "আমি কোটা আন্দোলনের নেতা। এই আন্দোলনে সরকার বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে"

দুই একটা শব্দ ঠিকভাবে না বলায় "আহসান" আবার লাথি, ঘুষি মারতে থাকে। এই সময় কানের উপর সে প্রচন্ড জোরে সর্বশক্তি দিয়ে চড় মারে। ছেলেটা প্রানপণ চেষ্টা করছে অজ্ঞান না হতে।

এর পর আবার ভয়েস রেকর্ড করা হলো। ফোন, ল্যাপটপ এ শিবির প্রমানের প্রানান্তকর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে রাতে ছেলেটা ছাড়া পায়।

ব্যাচমেট গুলোর মাধ্যমে রুমে পাঠানো হয় তাকে। শেষে "আহসান" বলে, "কয়দিন এর উপর নজর রাখিস।"

পরের দিন "আহসান" সকালে ডাকে। ছেলেটাকে "নাপা" ট্যাবলেট দেয়। বলে, "তোরে নিয়ে একদিন খাইতে যাব নে। কালকের ঘটনা ভুইলা যাইস"

ঘটনার তিন চার দিন পর সেই "বড়" ভাই ছেলেটাকে আবার তার রুমে ডাকে । ভারী গলায় বলে, "আমি জীবনে দুইটা বড় ভুল করেছি। দ্বিতীয়টা গতকাল, তুই আমার ছোট ভাইয়ের মতই। আমাকে মাফ করে দে। আয় তোকে একটু আদর করে দিই।" বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। যদিও ছেলেটা তাকে মাফ করে দেয় কিন্তু ঘটনাটা কখনোই ভুলতে পারেনা।

আর তার সেই ব্যাচমেট গুলো? কখনোই আর স্যরি হয়নি। কোনো অনুশোচনাও দেখায়নি।

কিছুদিন আগে ছেলেটা অনেকের সাথে ওই ঘটনার ব্যাপারে যোগাযোগ করে, কিন্তু সেই "দিব্য মণ্ডল" বেমালুম ভুলেই গেছে সেই রাতের পৈশাচিক ঘটনা।

উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত দুই জন ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাওয়ায় একজন কে "বড়" ভাই হিসেবে বলা হয়েছে আর অন্যজনের কথা বলা হয়নি। আর বাকি পাচ জনের মধ্যে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা ছিলো না, বরং তারা ঘটনাটা পাশ কাটিয়ে গিয়েছে।

আজ সেই ছেলেটার কারো উপর রাগ নাই। সবাইকে সে মাফ করে দিয়েছে। সে তো মানুষ, অমানুষ না। মানুষ মাফ করে দেয়, ভুলে যায় না।

কিন্তু সেই কালো রাত টা ছেলেটাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। মানসিক ট্রমা থেকে ও এখনো বের হতে পারেনি।

বিষন্নতা কাটানোর জন্য সে এই ঘটনা টা শেয়ার করে।

সে এই কুৎসিত পৈশাচিক ঘটনা টা শেয়ার করবে নাকি করবে না এই দ্বিধা কাটতে লেগে গেছে তার একটা দীর্ঘ সময়।

সে জানে না, সেই মানুষ গুলো ক্ষিপ্ত হবে কিনা। ছেলেটার লাইফ থ্রেট হবে হয়তো। ক্ষতি করতে চাইবে তারা।

কিন্তু ছেলেটা বিশ্বাস করে সত্যের জয় হবেই, আর বিপদে অনেক কেই সে তার পাশে পাবে।

…..........................................................................

আমি ওর পাশে আছি। আমি জানি, আমার বিশ্বাস, আপনারাও ওর পাশে থাকবেন।

নির্যাতকদের প্রোফাইলের লিংক এবং ছবি (একজন বাদে)

https://www.facebook.com/dibbyo.mandol

https://www.facebook.com/mdahsan.ullah.9

https://www.facebook.com/asb.bindu

https://www.facebook.com/diptaakash.roy

https://www.facebook.com/niloysenior