BUET-Reports / anonymous-report

The goal of this repository is to collect anonymous reports from victims of BUET rags, tortures.
95 stars 19 forks source link

Git Reports Issue #205

Open BUET-Reports opened 4 years ago

BUET-Reports commented 4 years ago

Submitter: অনিকেত করোনার প্রকোপ না আসলে হয়ত লিখতে বসতাম না কোনদিন। কটা দিন বাঁচব আর কে জানে। স্বীকারোক্তি করতে আসলাম। বুয়েটে একবারই হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। হলের বাথরুমে। সেই কান্নার স্বীকারোক্তি। শাওয়ার ফুল স্পিডে ছেড়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছিলো। চিৎকার করিনি। সাহস হয়নি সেদিন চিৎকার করার। সাহস হয়নি তখনো কিছু করার যখন হল থেকে ছেলেটাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে পাশবিক অত্যাচার করে পুলিশের হাতে তুলে দিলো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তখনকার জেনারেল সেক্রেটারি রাব্বানি। শেরেবাংলা হল তখন গিজগিজ করছে সব হলের ছাত্র দিয়ে। অথচ সাহসী মানুষও ছিলো সেই ভিড়ে। সেই যে ছেলেটা যে গেট রুখে দাঁড়ালো। বলল প্রমাণ দাও। প্রমাণ ছাড়া আমাদের বন্ধুকে নিতে দিবো না। তাদের কাছে প্রমাণ ছিলোনা। থাকার কথাও না। কারণ ছেলেটা শিবির নয়। একটা ছেলে। গেটে একলা দাঁড়িয়ে। প্রমাণ চাচ্ছে। গোটা বিশেক ছাত্রলীগ কর্মী। আমরা কয়েকশ আম ছাত্র। নিশ্চুপ। ঐ দৃশ্যপট আমি এখনো মুছতে পারিনা মন থেকে। এখনো আমার এরকম মাঝ রাত্তিরে এসে ভীষণ অসহায় লাগে। ছেলেটাকে মারতে মারতে শ ব্লকের দু'তলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চৌদ্দ ব্যাচের মিনহাজ গেটের সামনে চিৎকার করে বলছে, "আর কার প্রমাণ লাগবে। আয়।" তেরো ব্যাচের তামিম-রাহাত-রাজ। চৌদ্দ ব্যাচের ফুয়াদ-মুহুরী-রাফাত-অয়ন-শোভন-জয়দ্বীপ। তাদের ক্ষিপ্ত আগ্রাসী চেহারা। আমরা কয়েকশ আম ছাত্র হলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। শ ব্লকের দুতলা থেকে ধুপধাপ আওয়াজ আসছে। হ্যাঁ। মারের আওয়াজ। সেই সাহসী ছেলেটাকে। এই কয়েকশ ছেলে আমরা চুপ। নিস্তব্ধ। পিনপতন নীরবতা। মাঝখানে ধুপধাপ আওয়াজ। ছাত্রলীগের একজন একজন করে সেই রুমে যাচ্ছে।
সব চেহারা মনে নাই আমার। তবে মনে আছে রাসেলের হাসি। মনে আছে রাব্বানির দ্বিগবিজয়ী ভাষণ। আর মনে আছে আমাদের নিস্তব্ধতা। অথচ এতগুলা ভোকাল ছেলে আমরা দাঁড়িয়ে। তর্কে বিতর্কে আমরা দেশ ও জাতিকে বারংবার উদ্ধার করে দিতে পারি। আমরা সেদিন কিছু করতে পারিনি। কেন পারিনি সেই উত্তর আমার কাছে নেই। আমার কাছে আছে হলের বাথরুম আর রাতভর শাওয়ার ছেড়ে চিৎকার চেপে কান্না। সেদিন থেকে আমি অনেকবার প্ল্যান করেছি। অনেক ঘাটাঘাটি করেছি। বুয়েট শেষ করার আগে আমি খুন করে যেতে চেয়েছি ফুয়াদ আর রাসেলকে। খাবার বিষ, মোটর সাইকেলের ব্রেক অচল করে দেওয়া, একলা রাস্তায় চাকু মেরে দেওয়ার জন্য তাদের যাতায়াত ট্র্যাক করা এরকম বহু পদ্ধতি কল্পনায় সিমুলেট করেছি অসংখ্যবার। হ্যাঁ আমি খুন করতে চেয়েছি। গোপনে। অগোচরে। যতদিন হলে ছিলাম প্রতিটা রাত আমি ভেবেছি। প্ল্যান করেছি। হলের সিসি ক্যামেরা না থাকলে অন্তত মোটর সাইকেলে টুইক আমি সত্যি করে ফেলতাম। আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি বারবার-এই মানুষ দুইটা যদি না থাকে পৃথিবীতে, পৃথিবী কি আরেকটু ভালো যায়গা হয়ে যাবে কিনা বেঁচে থাকার জন্য। প্রতিবার উত্তর পেয়েছি হ্যাঁ। হ্যাঁ। হ্যাঁ। হ্যাঁ। মোরাল বেরিয়ার আমি অতিক্রম করতে পেরেছিলাম। জড়তাটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। পারলে হয়ত একটা নিরীহ ছেলেকে মরতে হতো না। এক টার্ম পেরোনো এতগুলো বাচ্চা ছেলে এভাবে নষ্টদের দলে ভিড়ে যেতো না। কিংবা হয়তো যেতোই শেষমেশ। আমি জানিনা। কিন্তু আমি অনুতপ্ত হই। আমরা সেদিন ঠিক আমরা হয়ে উঠতে পারিনি। বিন্দুকে ভয় পেয়ে চুপসে গিয়েছিলাম এক বৃত্ত ভরতি দেশসেরা মেধাবীরা। সেই বিন্দুগুলোই ধীরলয়ে সিন্ধু রচনা করছিলো বুয়েটে। নিশ্চুপ থাকার সেই দায় আমি এড়িয়ে যেতে পারিনা। এমন করোনার গভীর রাতেও ঘুমে শব্দ শুনি। পিনপতন নিস্তব্ধ জনতাকে সাক্ষ্য রেখে একটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে একটা ন্যায্য কথা বলার দায়ে বেদম মার খাচ্ছে। সেই মারের শব্দ শুনি। আমি মিনহাজের বেপরোয়া হুমকি শুনি। আমি রাসেলের হাসি দেখি। ফুয়াদের চোখে আগুন দেখি। তামিম রাহাতদের হুংকার শুনি। কয়েকশ অসহায় মুখ দেখি। আমি বাংলাদেশকে দেখি সেই দৃশ্যপটে। আমার খুব অসহায় লাগে। আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি ফেসবুকে ইমতিয়াজ জয়দের চটুল পোস্ট দেখি। আমি গোড়াটা ভুলতে পারিনা। শেরেবাংলার সব নষ্টদের সূত্রপাত কোত্থেকে সেসব ভুলতে পারিনা। আমি তাদের ভূমিকা ভুলতে পারিনা। একটা রাসেল একটা ফুয়াদ কিভাবে বীজ থেকে চারা হয়েছে সেসব ভুলতে পারিনা। অঙ্কুরোদগমের ইতিহাস ও তার ভুক্তভোগীদের ভুলতে পারিনা।
আমার ইচ্ছে হয় তাদের জিজ্ঞেস করতে, তারা কেমন করে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আমার বেশ শিখতে ইচ্ছে হয়। নীরব থাকার অপরাধ থেকে আমার বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। ফল ভোগ ছাড়া নাকি পাপমোচন হয় না। তাই আমি ঘুমাতে যাই না। আমি স্বীকারোক্তি লিখি।