BUET-Reports / anonymous-report

The goal of this repository is to collect anonymous reports from victims of BUET rags, tortures.
95 stars 19 forks source link

All ragging story merged 2 #215

Open Tanvir500 opened 7 months ago

Tanvir500 commented 7 months ago

রাশ্শে, মেকা ০৪ BUETian Page

24 October 2019

শেরে বাংলা হল ১৬ ব্যাচ থেকে পোস্ট

১২। ধ্রুব জ্যোতি ঘোষ ( সিভিল ১৫) - হিপোক্রেসির আরেক নাম

তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে সে পলিটিকাল না, কিন্তু আমরা যারা হলে থাকি তারা এই তিন বছর তাকে খুনিদের সাথেই ঘুরতে দেখেছি, তাদের পাওয়ারে চলতে দেখেছি। শুনলাম তার পরিচিত ১৫ ব্যাচের মানুষজন বিশ্বাসই করতে পারছে না ধ্রুব জ্যোতি র‍্যাগ দিতে পারে (যেহেতু সে ফেসবুকে অনেক সুশীল একজন মানুষ)। তো সেই ভ্রম ভেঙে দেওয়ার জন্য এই পোস্ট শেরে বাংলা হল ১৬ এর পক্ষ থেকে। এই পোস্ট দেওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু গতপরশু তাকে নিয়ে শেরে বাংলা হল ১৫ এবং ১৬ বসে আলোচনা করতে একসাথে বসি। সেখানে তাকে সুযোগ দেওয়া হয় কোনো ঘটনা নিয়ে ক্ষমা চাইতে হলে ক্ষমা চেয়ে নিতে। কিন্তু আশ্বর্যজনক হলেও সত্য, তার বিরুদ্ধে এতগুলো এলিগেশন থাকার পরও সে শুধুমাত্র ফারহান জাওয়াদকে থাপ্পড় মারার কথা স্বীকার করে, বাকিগুলো বলে তার মনে নাই। তারপর তাকে নিচের কাহিনিগুলো মনে করে দেওয়ার পর তাকে ডিফেন্স করার সুযোগ দেওয়া হলে, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র রিহোর্স দেখা যায়নাই। বরং ক্ষেত্রবিশেষে আমাদের উপরই এগ্রেসিভ আচরণ করতে যায়। একটা মানুষ মারা গেছে হলে, সেটা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র বিকার নাই, বরং তার আচরণে মনে হচ্ছে কিভাবে পরে আমাদেরকে শায়েস্তা করতে পারবে সে চিন্তাভাবনায় আছে। এমনকি তার নামে এটাও শোনা যাচ্ছে, সে অন্য হল এবং আমাদের হলের এক্স ব্যাচগুলোর পলিটিকালদের সাথে কন্ট্যাক্ট রেখে চলেছে; যেটা আমাদের পুরো হলের জন্যই ভয়ংকর সিকিউরিটি রিস্ক। তো তার মুখোশ উন্মোচনের জন্য নিচের ঘটনা তুলে ধরা-

তার নামে র‍্যাগিং এর ঘটনা গুলো নিচে দেওয়া হল-

অভিযোগকারী - ১

১৫ আগস্ট, ২০১৭। ক্যান্টিনের সামনে মুন্না, রবিন, সিয়াম, অনিক, ধ্রুব, জিয়ন সহ আরো কয়েকজন দাড়ায়ে আড্ডা দিচ্ছিল আর আমাদের দিকে তাকায় ছিল এক দৃষ্টিতে। আমরা ক্যান্টিনে তুকার সময় সালাম দিসিলাম, ২ মিনিট পর বের হবার সময় দিই নাই। বের হবার পরও দেখি সবাই তাকিয়ে আছে। রাত ২:০০ টা। হঠাৎ সবার ডাক পড়ে কমনরুমে যারা বিকেলে ক্যান্টিনের সামনে ছিল। ঢুকতেই তীব্র গালিগালাজ কেন আমাদের হলের ১৬ এত কম ছিল আজকের মিছিলে।এরপর কারা কারা মিছিলে ছিল না তাদের সামনে এনে কারণ জিজ্ঞেস করে, অজুহাত মনমত না হলে বেধড়ক মারতে থাকে। সাকিব আবরারকে তারপর কোনো কারণ ছাড়াই ডেকে বলা হয় সে অনেক বেয়াদব হয়ে গেসে।তারপর আমাদের বলা হয় সবাই গিয়ে গিয়ে ওকে থাপড়ায় আয়। আমরা বাধ্য হয়ে সেটা করতে থাকি। যারা আস্তে চড় দিসি, তাদের ধমকে বলা হলো আরো জোড়ে। এরপর একে একে বাছাই শুরু হলো। আমাকেসহ আরো কয়েকজন কে বাছাই করে হাজার ব্লকের ছাদে পাঠানো হয়।*(বারি পরে আসে) ছাদে আসে মুন্না, অর্ক, ধ্রুব,সিয়াম,জিওন , মুনতাসির(ইউয়ারপি) সহ আরো নাম না জানা কয়েকজন দশ মিনিট পর আসে(কমনরুমের সব ১৫ ছিল না) এরপর সেখানে উপস্থিত অনেককে থাপ্পড়, স্ট্যাম্প দিয়ে মারা হয়। এখন এসে আমার মনে করতে কষ্ট হয় কি কি হচ্ছিল, গালিগালাজ, ব্যাথার আর্তনাদ এগুলাই খালি মনে পড়ে। এরপর মনে পড়ে নিজের টার্ন। ইশতিয়াক মুন্না এসে বলে দোষ বল।আমার একচুয়াল কোন ফল্ট ছিল না, তাই বললাম সালাম দিই নাই। তারপর ধ্রুব জ্যোতি ঘোষ পিছন থেকে এসে "বলতে থাক" বলে স্টাম্প দিয়ে জোড়ে জোড়ে বাড়ি দিতে থাকে। সাথে আসিফ জামিল অর্ক(কেমিক্যাল ১৫) এর থাপ্পড়। এক্সট্রিম পার্ট আস্তে ধীরে শেষ হয়, ততক্ষণে আজান দিয়ে দিসে। ঠায় ৩-৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তার উপর মারের ব্যাথা। সবাইকে বসতে বলা হলো।তারপর সবাইকে চটি নাটক/চটি গান/ এসব ভাগ করে দেয়া হয়।আমাকে সাকিবকে আর ইথানকে বলা হয় সেক্স সিমুলেট করে দেখাইতে।শেষে চটি ডিবেট।সব সেক্স রিলেটেড জিনিসপত্র যেগুলা খুব ঘেন্নাকর লাগছিল।

অভিযোগকারী - ২

ধ্রুব জ্যোতি এর জন্য র‍্যাগের দিন আমার অনিকের হাতে টানা ৪-৫ টা থাপ্পড় খাওয়া লাগছে। সাথে রবিন আর জিওন এর থাপ্পড় তো আছেই। র‍্যাগের দিন যখনই রবিন আমাকে সামনে আসতে বলে ধ্রুব ভাই পাশের থেকে বলতেছে, এ তো বড় ভাইদের চুদোস না। একে ভালো করে মার। এছাড়া আরো উষ্কানিমূলক কথাবার্তা তো আছেই।যার ফলে আরও বেশি মার খেতে হয় আমাকে। এবং এগুলার জন্য তারমধ্যে বিন্দুমাত্র অনুপোচনা নাই।

অভিযোগকারী - ৩

একদিন রাতে সবাইকে ডেকে নিছিল, যারা যারা ক্যাফেতে গেছিল বা হাফ প্যান্ট ইত্যাদি পড়ে ওয়াশরুমে গেছিল এইসব কারণ নিয়ে।

আমি হাফ প্যান্ট পরে ওয়াশরুমে গেছিল। এরকম যারা করছে সবাইকে এক লাইনে দাঁড়াইতে বলছে, আমিও দাঁড়াইসি। একজন একজন করে মেরে/বকাঝকা করে আমার পালা আসছিল।

আমি দাঁড়াইছিলাম, কি দোষ করছি আস্কস্ক করছে, বললাম সেটা। দেন বকাঝকা করতেসিল। এক পর্যায়ে পাশের ভাইদের নাম আস্ক করছে, ধ্রুব ও ছিল।তার নাম-পরিচয় বলতে পারি নাই, তখন ধ্রুব আমাকে থাপ্পড় মারে। এরপর আমার খুব রাগ হচ্ছিল, চোখেমুখে সেটা বুঝা যাচ্ছিল,সেটা দেখে আমাকে গালি দিয়ে বলে "আরো মার বেয়াদবটারে"।তারপর আরেকটা জোরে থাপ্পড় মারছে। ভাগ্যিস কানের হাল্কা নিচে দিয়ে লাগছিল আমি মুখটা হাল্কা সরাইছিলাম দেখে,নইলে যেভাবে মারছে কানেও লেগে কান ফেটেও যেতে পারতো।

অভিযোগকারী - ৪

আমার কাহিনি মোটামুটি ডিফারেন্ট। মানুষকে দেখতাম র‍্যাগ খায় বিভিন্ন দোষে। আমি চলতাম খুব সাবধানে। আমার হলের কোনো পলিটিকাল আমাকে কোনোদিন মারে নাই, কিন্তু আমি ঠিকই মার খেয়েছি ধ্রুব জ্যোতির কাছে। মজার ব্যাপার হল কোনো এক্সাক্ট কারণও নাই মারার। ৫ তলায় থাকতে একদিন বাথরুমে যাচ্ছিলাম ১-১ এ। তখন করিডোরে ১৫ ব্যাচের অনিক, মুনতাসির আর ধ্রুব জ্যোতির। আমাকে হঠাত করে ডেকে ওনারা কিছু কোশ্যেন আস্ক করে। ওখানে আগে থেকে আরেকজন ১৬ ব্যাচের ছিল। তারপর মুনতাসির ভাই বলে "তোর সিটি আছে না? চলে যা।" তারপর ধ্রুব জ্যোতি ১৬ ব্যাচের ঐ ছেলেকে বলে আমাকে থাপ্পড় মারতে। ( নিজে থাপ্পড় দেওয়া, আর ব্যাচমেটকে নির্দেশ দিয়ে থাপ্পড় দেওয়া একই অপরাধ আশা করি সবার কাছে)। আমার মনে আছে থাপ্পড় মারতে যখন বলে তখন অনিক অথবা মুনতাসির ধ্রুব জ্যোতিকে বলেছিল, "ওকে কেন মারবি, ও তো কিছু করে নাই।" তারপরও ধ্রুব জ্যোতি কেয়ার করে নাই। ঠিকই থাপ্পড় দেওয়াইছে আমাকে আর আমাকে দিয়ে ১৬ ব্যাচের আরেকটা ছেলেকে থাপ্পড় মারাইছে।

এরপর কিছুদিন পর ১-১ এ থাকাকালীন সময়েই, কোনো একদিন র‍্যাগের সময় আরেকবার সেম কাজ করে, ১৬ এর কাওকে দিয়ে থাপ্পড় মারায় আমাকে। সেই কাহিনি এক্সাক্ট মনে নাই। বাট ধ্রুব জ্যোতির কারণেই খেয়েছিলাম সেটা মনে আছে এবং এই দুইটা থাপ্পড় এর ক্ষোভ আমার তিন বছর ধরে আছে।

*অভিযোগকারী - ৫ঁ

ধ্রুব জোতি ঘোষ আমার বুয়েট জীবনের প্রথম র‍্যাগে উপস্থিত ছিল বললে কম হবে। বরং সেই ইনিশিয়েট কারি ছিল। সে ই ডেকে এনে আমাকে ২০৬ এ নিয়ে যায় আমাকে আর আরো কয়েকজনকে একসাথে। ২০৬ এর রুমে তালা বন্ধ থাকায় ২০৫ দিয়ে বারান্দা দিয়ে নিয়ে গিয়ে রুমে ঢোকায়। এসময় রুমে মুন্না, অনিক, অর্ক সহ আরো অন্য অনেকে উপস্থিত ছিল। পেছনে পার করার সময় পাশের রুমের কিছু বড় ভাই জিজ্ঞেস করলে কি করছি, ধ্রুব জ্যোতি বলে "ভাই নজর দিয়েন না। কিছুক্ষণ শব্দ টব্দ হবে এই রুমে।" খুব মশকরার স্বরে বলল এসব কথা।

সত্যি বলতে একটা তালাবদ্ধ রুমে ঢুকায়ে র‍্যাগ দিতে আনা জিনিসটা বেশ ভয়ঙ্কর লেগেছিল প্রথম দিককার ভার্সিটি লাইফে। এরপর সে নিজে হাত তুলেনি গায়ে তবে উসকে দিয়েছে বেশ কবার সবাইকে। ব্যাচমেটদের দিয়ে থাপ্পড় দিয়েছে বেশ কবার। এছাড়া ছাদে তোলার দিনেও সে ছিল যা আমি আলাদা একটি পোস্টে শেয়ার করেছি।সে এক্ষেত্রেও আমাকে সরাসরি মারেনি একবারও, কিন্তু এখানেও গালিগালাজ করে আর দোষ ধরিয়ে অন্যদের উসকে দিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে প্রচন্ড মার খাই আমি।আমি ইভেন এক সপ্তাহ ধরে ঠিকমত ওঠাবসা করতেও পারতাম না।এছাড়াও ওই রাতে কিছুক্ষণ পর আমার বন্ধু মিনহাজ রহমানকে আমার চোখের সামনেই স্ট্যাম্প দিয়ে মেরেছিল।

অভিযোগকারী - ৬

আমি সহ ৩০-৪০ জনকে ১-২ এর শুরু দিকে ৫১১ নং রুমে ডেকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এসময় অনিক সরকার, রবিন, জিয়ন, অর্ক, ধ্রুব জ্যোতি রুমে উপস্থিত সকলের উপর রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। ধ্রুব জ্যোতি এসময় পাশের থেকে নির্যাতনকারীদের উস্কে দিচ্ছিল আরো বেশি মারার জন্য। তার অভিযোগ ছিল "সিড়ি দিয়ে উঠানামার সময় সালাম না দেওয়া"। ধ্রুব জ্যোতি ডিরেকটলি আমার গায়ে হাত না তুললে তার কন্টিনিউইয়াস উস্কানিতে আমাকে এত মার খেতে হয়। এক পর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে বমি করা শুরু করলে জিয়ন আমাকে বাইকে করে একটি ফার্মেসিতে নিয়ে বমির ওষুধ খাওয়ায়। সাইফুল(১৬) ও সেদিন উপস্থিত ছিল এবং ধ্রুব তাকেও নির্যাতনের জন্য নির্যাতনকারীদের উস্কে দিচ্ছিল।

এধরণের একটা অমানুষকে যদি এখনো আপনারা সাপোর্ট দিতে চান, আপনাদের সিম্প্যাথীর যোগ্য হয়, আপনার বিবেক বুদ্ধি যদি সেটা বলে তাহলে সেটাই করেন। আমরা আপনাদেরকেও অমানুষ ভাববো আরকি। তদন্তের সুবিধার্থে সে এখন হলে আছে এবং তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অলরেডি প্রভোস্ট, এসিস্ট্যান্ট প্রভোস্টকে দেওয়া হয়েছে। ওনারা তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।

এখন তাকে আপনারা কি মনে করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। সে মানুষের কাছে অনেক বড় সুশীল জানে, মানুষ তাকে সামওয়াট র‍্যাগবিরোধী মানুষ হিসেবে জানে। আর যাই হোন, ওনার মতো হিপোক্রিট হইয়েন না। BUETian Page

09 October 2019

১৩। বুধবার রাতঃ আতঙ্কের আরেক নাম

আমাদের হলে শুরু থেকে প্রতিটি বুধবার রাত থেকেই আমাদের মধ্যে আতংক ছিল। কারণ,এই দিন আসলেই আমাদের ডাক পড়তো র‍্যাগ খাবার জন্য। বিশ্বাস করেন, আমাদের র‍্যাগ মোটেই কোনো সুন্দর কিছু ছিল না।

আমাদের শুরু থেকেই হাওয়াই চেয়ার বানানো হতো, অসংখ্যবার কান ধরে উঠবোস করানো হতো, বুকডন দেওয়ানো হতো। এগুলো তাও আমরা মেনে নিতাম, আমাদের পর্ণ দেখানো হতো জোর করে এবং বলা হতো আরেক ক্লাসমেটকে এভাবে করে দেখাতে এবং পর্ণে যেরকম শব্দ হয় ঠিক সেরকম করতে। আমাদের পর্ণ দেখায় হস্তুৈথুনের অভিনয় করানো হতো। চুপচাপ করলেও হতো না, আমাদের ফিলিংস এনে শব্দ করতে বলা হতো। এরকম না করলে আরো হুমকি করা হতো। ভাইরা মাঝে মাঝে বলতো কারো খারাপ লাগে কিনা? খারাপ লাগে যদি বলতো কেউ তাকে আরো এক্সট্রিম আচরণ করা হতো। তবে আগষ্ট মাসের শেষ দিকে একবার আমাদের সবাইকে ডাকা হয় এবং আমাদের কয়েকজনকে রেখে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর আমাদের ছাদে তোলা হয়। ছাদে ৭ জন ভাই ছিল ১৭ এর। তারা আমাদের সবাইকে অনেক অনেক লেম রিজন দেখায় মারতেই থাকে।

একজনকে মারে সে ভাইদের না বলে হলের বাইরে কি করতে গিয়েছিল? সে যখন বলে মা-বাবা এসেছিল তখনও তাকে মারতেই থাকে স্ট্যাম্প দিয়ে। সবাই ঘুরে ফিরে মারে তাকে।

আরেকজন ভাইদের না বলে টিউশনিতে যাওয়ায় তাকে মারতে থাকে অমানবিকভাবে। একজন তার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরাতে মার খায়।আর ভাইকে দেখার পরও সালাম দেয় নাই কেন এজন্য আরো খায়, পাশাপাশি এটার জন্যও মার খায় কারণ তার হাঁটার স্টাইল ভাইদের পছন্দ হয় নাই।

আমাকে মারার ফার্স্ট রিজন হচ্ছে ভাইদের না বলে মুভি দেখতে যাওয়া। আমি 'হবস এন্ড শ' দেখছি শুনে বলে এটা তো ফালতু মুভি, এটার জন্যও আমারে মারে। একবার র‍্যাগ দেবার সময় ভাইরা আমাদের এক ক্লাসহেটকে মারতে বলে, আমি মারছিলাম। এটার জন্যও আমাকে মারা হয়, সিএসবি তে আমি ভাইদের না বলে কেন পোস্ট দিছি সেজন্যও মারা হয়।

আমাকে সবাই মারছে যারা ছিল। আমি আগে থেকেই এক্সারসাইজ করি বলে শরীর পেটানো ছিল। ভাইরা তারপর বলে, জীবনে তো এক্সারসাইজ করা শরীরে মারি নাই,আরেকটু মেরে নিই। এটা বলে সব বিচার শেষ হবার পরও আমাকে মারতে থাকে। আমি নিজে জানি আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি সেদিন। স্ট্যাম্প দিয়ে মার খেতে খেতে আমি ব্যাথার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন। খালি ভাবছিলাম ফেরত যেতে পারব তো আজ?

খুব কষ্ট হয়েছিল। শারীরিক এর চেয়ে মানসিক বেশি। প্রায় ৪/৫ ঘন্টা আমাদের আটকে রেখে মারে ২০১৭ এর ব্যাচের এরা।

আমাকে ভাইরা র‍্যাগ দিতে গেলেই বলছে সবসময় বুকডন দিতে। আমার হাত ভাঙা কিন্তু তবুও দিতে বাধ্য করছে।

আসলে আমার কারো উপরই ক্ষোভ নাই,নইলে নাম উল্লেখ করতাম। আমি পাপীদের না, পাপকে ঘৃণা করি। আমি স্রেফ চাই এরা যেন সুবোধকে ফেরত পায়, বুয়েটে শান্তি আসলেই আমি খুশি।

( নাম প্রকাশ্ অনিচছুক) বুট্যেট র‍্যাগের ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা Published on Risingbd.com (বুয়েটে রংযাগের ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা (risingbd.com))

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষার্থীদের র‍্যাগ দেয়ার ঘটনার কথা বিভিন্ন সময়ে উঠে আসলেও সব প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

র‍্যাগের নামে ‘বড় ভাইয়েরা' যা করেছে সেটি শুনলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে যে কারো। ভবিষ্যতে নিজের সন্তানকে কোনো অভিভাবক বুয়েটে পড়াশোনার জন্য পাঠাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে একশবার ভাববেন।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ

হত্যাকাণ্ডের পর নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন শিক্ষার্থী। র‍্যাগের নামে পর্নো মুভি দেখিয়ে সে অনুযায়ী অভিনয় করান্ো হত্তে তাদের। র‍্যাগের অত্যাচর সহ্য করতে না পেরে অনেকে বুয়েট ছাড়ারও চিন্তা করেছে বিভিন্ন সময়ে। তাদের মন্তব্য এমন, 'বুয়েটকে বাইরে দেখে অনেক ভালো লাগত, ভিতরে এতো খারাপ!'

শিক্ষার্থীদের ভাষায় র‍্যাগের ভয়াবহতা :

১৪। পর্নো দেখিয়ে আইটেম গানে নাচানো :

আমি রফিক ( ছদ্মাম)

এক বুধবার রাতে আমাকেসহ মোট পাঁঁজনকে 'আউলা'র ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অপরাধ ছিল ভাইরা আমাদের গণরুম থেকে র্যান্ডমলি দুই/তিনজনকে পাঠায় দিতে বলছিল। ভয়ে কেউ প্রথমে যাইনি। তিনজন ভাই এসে র্যান্ডমলি আমাদের পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যায়।

ছাদে আমাদের পাঁচজনকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ম্যানার, বুয়েট পলিটিক্স কেন সবার থেকে আলাদা সেটা শেখায়। আমাকে একজন ভাই টিশার্ট ধরে ধাক্কাধাক্কি করে গালে পাঁচটা (আস্তে, বাট চড় তো চড়ই) চড় মেরেছিলো। আর প্রায় ঘণ্টার মতো একপায়ে দাঁড় করে রেখেছিলো। সেখানে আরেক ভাই বলেছিলো, একটু পর পর পা চেঞ্জ করতে পারিস। বাকিদেরকে অনেক হেনস্থা করা হয়। যাই হোক, এই দেড়ঘণ্টা পর পুরো NTS (আউলার একটা গণরুম) কে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখানে কী হয় আশা করি বাকি যারা ছিল বলবে।

হলের প্রথমদিকে হলের পপুলার দুই ভাই পালা করে করে রুমে নিয়ে গিয়ে র‍্যাগ দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে আমাকে আর মাকসুদকে (CSE) রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে দিয়ে মাকসুদকে ( ছদ্মনাম) এবং মাকসুদকে দিয়ে আমাকে মারা হয়। আমাদের ভাইদের সাথে জোর করে পর্নো দেখানো হয় এবং আইটেম সংয়ের সাথে আমাদের নাচানো হয়। আমি ভাইদের হেন্টাল টর্চারগুলো নিতে পারি নি। এ রকম অনেক ঘটনা সবার সাথে প্রায় ঘটতো। ১৮ ব্যাচের সবার সাথেই এরকম কম-বেশি হয়েছে। তারা হয়তো মজা করে করেছে, বাট তাদের মজাগুলো সবাই নিতে পারেনি। অনেক রাতে বাথরুমে কান্নাকাটি করেছি। প্রথমে আমি অনেক পড়ালেখা করলেও এই ভাইদের জন্য পড়ালেখা প্রায় ছেড়ে দিয়েছি।

আমি প্রথম দিকে অনেক একটিভ, হাসিখুশি ছিলাম; বুয়েটে কয়েকদিন থাকার পরের অবস্থা ব্যাচহেটকে/ক্লোজ ভাইদের জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারা যাবে। বুম্যেটকে বাইরে দেখে অনেক ভালো লাগত, ভিতরে এতো খারাপ অবস্থা ভর্তি পরীক্ষায় আর দুইটা অঙ্ক ভুল করলে কোনোদিন জানতাম না।

সালাম না দেয়ায় স্টাম্প দিয়ে পিটানো হয়:

আমরা রশিদ হল ১৭ সবে মাত্র এক-দুইতে উঠেছি। বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার (এক্সাক্টলি মনে নাই) রাতে কমন রুমে ডাকা হলো। এর আগে সাধারণত বুধবার রাতে ডেকে র‍্যাগের নামে ধমক, ব্যাচমেটকে দিয়ে থাপ্পর এবং মজা নেওয়া হত। কিন্তু ওইদিন রাত্রে আমাদের একজন ব্যাচমেটকে দিয়েই স্টাম্প আনানো হল। তারপর একে একে স্টাম্প দিয়ে পিটানো শুরু করল। প্রথহে একজনকে জিজ্ঞেস করলো সালাম দেয়নি কেন? সালাম না দেয়ার কারণে তাকে ১৬ ব্যাচের রামকৃষ্ণ তন্ময় তাকে ৫ মিনিট পিটায়। তারপর একজন কেন অ্যাডমিশন রিলেটেড পেইজে মোটিভেশনাল পোস্ট দেয় দেজন্য তাকেও পেটানো হল। তারপর কয়েকজনকে এভাবে পিটানোর পরে রামকৃষ্ণ তন্ময় ক্লান্ত হয়ে পরে, পেটানোর দায়িত্ব নেয় ১৬ ব্যাচের মোহাইমিনুল সৌরভ। তারপর ৫/৬ জন করে এককাতারে দাঁড় করিয়ে পেটায়। একজন কেন মেয়ে ক্লাসমেট নিয়ে ঘুরলো সেই জন্যও তাকে মারা হল। তারপর আরেকজন কেন ভাই এর সিলেক্ট করা রুমে ওঠে নাই, সেজন্যও তাকে মারা হয়। তাকে পায়ে ও পাছায় অন্তত ৪০টি আঘাত করা হয়। এভাবে প্রায় ২০/২৫ জনকে দুইজন মিলে মারে। এর মধ্যে কয়েকজনকে কোনো কারণ ছাড়া মারা হয়। তারপর এভাবে ৩/৪ ঘণ্টার অমানবিক নির্যাতন শেষে আমাদের ছাড়া হয়। এই নির্যাতনের পরে অনেকেই হাটতে পারছিলো না।

১৫। অত্যাচারে বুয়েট ছাড়তে চেয়েছিলেন একজন

১৫ ব্যাচের আমার একজন প্রিয় বড় ভাই আছেন। আমাকে যখন আউলার এক্সটেনশনে র‍্যাগ দেয়, তখন ইনি কিছুই করেন নাই তেমন। বরং র‍্যাগ শেষে ভাই নিজেও অনেক দু:খ করেছিলেন। সেই ভাই অনুতপ্ত। কিন্তু যে তিনজন আমাকে ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আরো দশ/বারোজন দিলে র‍্যাগ দিছে, পুরো ফার্স্ট ইয়ার আমার লাইফ হেল করে ফেলেছিলো। তারা এখন সাধু সেজে বেড়াচ্ছে। এতোই মানসিক প্রেশারে ছিলাম যে, সবসময় ভয় হতো এই বুঝি আবার আমার দোষ ধরে। আবার না র‍্যাগ খাই। এমন অবস্থা হয়েছিলো যে, কাঁদতে কাঁদতে এদেরকে বলেছিলাম, 'বুয়েটেই আর থাকবো না'। 'আউলা ১৬' এর প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এই ব্যক্তি ছিলো কমন। এ আমাকে ফার্স্ট ইয়ারে অসহায় বানিয়েছিলো। আমি হল পর্যন্ত ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকায় থাকার মতো কোনো জায়গা বা আত্মীয় নেই। আবার মেসে থাকবো, সেই টাকা কোথায় আমার। আমি গ্রামের ছেলে অনেক কষ্ট, স্ট্রাগল করে এই বুয়েটে এসেছিলাম। আর এসে এসব হারামিদের হাতে পড়েছিলাম। সে সময়ের মানসিক টর্চার আমি সারাজীবনেও ভুলতে পারবো না। কতটা অসহায় বানিয়েছিলো এই আমাকে। আমাকে যখনই দেখতো, তখনই কোনো না কোনো দোষ ধরে যে র‍্যাগ দিতো। সারাজীবনেও এই হারামিকে ভুলতে পারবো ना।

১৬। র‍্যাগের নামে হস্তমৈথুনের অভিনয় করানো হতো:

'আমাদের হলে শুরু থেকে প্রতিটি বুধবার রাত থেকেই আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছিলো। কারণ এইদিন আসলেই আমাদের ডাক পড়তো র‍্যাগ খাবার জন্য। বিশ্বাস করেন, আমাদের র‍্যাগ মোটেই কোনো সুন্দর কিছু ছিল না। আমাদের শুরু থেকেই হাওয়াই চেয়ার বানানো হতো, অসংখ্যবার কান ধরে উঠবস করানো হতো, বুকডন দেওয়ানো হতো। এগুলো তাও আমরা মেনে নিতাম। আমাদের পর্নো দেখানো হতো জোর করে এবং বলা হতো আরেক ক্লাসমেটকে এভাবে করে দেখাতে। পর্নোতে যে রকম শব্দ হয় ঠিক সে রকম করতে বলা হতো আমাদের। আমাদের পর্নো দেখায় হস্তমৈথুনের অভিনয় করানো হতো। চুপচাপ করলেও হতো না, আমাদের ফিলিংস এনে শব্দ করতে বলা হতো। এ রকম না করলে আরো হুমি করা হতো। ভাইরা মাঝে মাঝে বলতো কারো খারাপ লাগে কি না? খারাপ লাগে যদি বলতো কেউ তাকে আরো এক্সট্রিম আচরণ করা হতো।

আগস্ট মাসের শেষ দিকে একবার আমাদের সবাইকে ডাকা হয় এবং আমাদের কয়েকজনকে রেখে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর আমাদের ছাদে তোলা হয়। ছাদে ৭ জন ভাই ছিল ১৭ ব্যাচের। তারা আমাদের সবাইকে অনেক অনেক লেম রিজন দেখিয়ে মারতেই থাকে।

একজনকে মারে এই কারণে যে, সে ভাইদের না বলে হলের বাইরে কি করতে গিয়েছিল? সে যখন বলে মা-বাবা এসেছিল তখনও তাকে মারতেই থাকে স্ট্যাম্প দিয়ে। সবাই ঘুরে ফিরে মারে তাকে। আরেকজন ভাইদের না বলে টিউশনিতে যাওয়ায় তাকে মারতে থাকে অমানবিকভাবে।

একজন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে যাওয়ায় মার খায়। আর ভাইকে দেখার পরও সালাম দেয় নাই কেন এজন্য আরো মার খায়। পাশাপাশি এটার জন্যও মার খায় কারণ তার হাঁটার স্টাইল ভাইদের পছন্দ হয় নাই।

আমাকে মারার ফার্স্ট রিজন হচ্ছে ভাইদের না বলে মুভি দেখতে যাওয়া। আমি ‘হবস এন্ড শ' দেখছি শুনে বলে এটা তো ফালতু মুভি, এটার জন্যও আমারে মারে। একবার র‍্যাগ দেবার সময় ভাইরা আমাদের এক ক্লাসমেটকে মারতে বলে, আমি মারছিলাম। এটার জন্যও আমাকে মারা হয়, সিএসবিতে আমি ভাইদের না বলে কেন পোস্ট দিছি সেজন্যও মারা হয়।

আমাকে সবাই মারছে যারা ছিল। আমি আগে থেকেই এক্সারসাইজ করি বলে শরীর পেটানো ছিল। ভাইরা তারপর বলে, জীবনে তো এক্সারসাইজ করা শরীরে মারি নাই, আরেকটু মেরে নিই। এটা বলে সব বিচার শেষ হবার পরও আমাকে মারতে থাকে। আমি নিজে জানি আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। স্ট্যাম্প দিয়ে মার খেতে খেতে আমি ব্যাথার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন। খালি ভাবছিলাম ফেরত যেতে পারব তো আজ? খুব কষ্ট হয়েছিল। শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক কষ্ট বেশি ছিল। প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা আমাদের আটকে রেখে মারে ২০১৭ এর ব্যাচের এরা।

আমাকে ভাইরা র‍্যাগ দিতে গেলেই বলছে সবসময় বুকডন দিতে। আমার হাত ভাঙা কিন্তু তবুও দিতে বাধ্য করছে। আসলে আমার কারো উপরই ক্ষোভ নাই, নইলে নাম উল্লেখ করতাম। আমি পাপীদের না, পাপকে ঘৃণা করি। আমি স্রেফ চাই এরা যেন সুবোধকে ফেরত পায়, বুয়েটে শান্তি আসলেই আমি খুশি।

এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর র‍্যাগের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবি উঠছে আইন করে ছাত্র নির্যাতনমূলক র‍্যাগ প্রথা নিষিদ্ধ করার।

Rahmi (18 batch)

09 October 2019

শেরে বাংলা হল

8 সেপ্টেম্বর, 2019

নাহিয়ান-mme-17

মিরাজ-civil-17

রানা-CSE-17

সাদাত-ME-17

রাফাত-ME-17

তৈক্পিক-ME-17

নাবিল-EEE-17

তোহা-ME-17(আবরার হত্যা মামলার আসামি)

তানিম-civil-17(আবরার হত্যা মামলার আসামি)

জেম্মি-ME-17(আবরার হত্যা মামলার আসামি)

শামিম বিল্লাহ-NAME-17(আবরার হত্যা মামলার আসামি)

আরো দু-একজন ছিল,নাম জানা নেই,কিন্তু মূলত এরা আমাকে সহ ১০ জন ১৮ কে ছাদে তুলেছিল।আমার দোষ ছিল,আমি সৌমিত্র লাহিড়ীর আমার ফ্রেন্ড এর কান ফাটানো নিয়ে ক্যামিকেল-১৮ কে এক করতে চেয়েছিলাম।

'এই নেতা হতে চাস মাদারচোদ' বলে প্রথমেই মারে তানিম খুব জোরে থাপ্পড়।এরপর শামিম বিল্লাহ বেল্ট দিয়ে মারে।পালা করে এভাবে সবাইকে এভাবে মারে ওরা।একজনের দোষ ছিল সে লুংগি পরে উপরের তালায় উঠসিল পানি আনতে, আরেকজন হল ফুটবলের জারসি অনেকদিন ধরে পরে বলে,আরেকজন ক্যাফের সামনে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ভাইকে খেয়াল করেনি বলে ইত্যাদি ইত্যাদি।

দফায় দফায় মার চলে।আমার উপর মনে হয় রাগ বেশি ছিল।আমাকে ১৮ ছেলেদের সামনে এনে সবার নাম-ডিপারটমেন্ট বলতে বলে।আমি হলে অনেক দেরি করে উঠেছিলাম,কারো সাথে তেমন পরিচয় নেই,২-১ জন ছাড়া কার নাম বলতে পারি নাই,পরিনামে ব্যাচমেট যাদের নাম বলতে পারিনি তাদের সবাইকে দ্বারা আমাকে থাপ্পড় দেওয়াইসে।যারা আস্তে থাপ্পড় দিল তাদের পাচগুন জোরে থাপ্পড় মারছিল ১৭।

এরপর আবার শুরু করে ১৭ এর নাম-ডিপারটম্যান্ট বলার জন্য মার।ওদের তেমন কারো নাম পারিনি,তাই মার খেলাম প্রায় সবার কাছেই।তবে এর উপকারিতা হল উপরের লিস্টটা দিতে পারলাম,ভাইদের কাছে শেখা।

মাথা ঘুরে যাচ্ছিল শেষের দিকে একেকটা থাপ্পড়ে।কান্না করছিলাম কিন্তু ব্যাথায় নয়, রাগে।এরপর কিছু অপমানজনক শাস্তি দিয়ে এবং বিনোদন হিসেবে 'উড়ন্ত মাগি ঝুলন্ত দুদ' এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে ছেড়ে দেয় আমাদের।

আমি ৯ তারিখ হল ছাড়ি। ১৭ এর ওরা জানার পর আমাকে নিষিদ্ধ করে দেয় হলে,আমি নাকি ভুলেও ঢুকতে পারব না হলে আবরারের জায়গায় আজ আমিও থাকতে পারতাম । হয়ত সাড়ে তিন বছর আগেই আমার মৃত্যু দিয়ে বুয়েট থেকে ছাররাজনীতির কলুষিত অধ্যায় গলো বিলীন হয়ে যেত । আল্লাহ চাইলে আবরার হয়ত আমার কারণেই বেচে থাকত ।

তিতুমীর হল

সময় ৩ মে, ২০১৬, সোমবার পেরিয়ে মঙ্গলবার ঠিক রাত ১২ টা । বিকালে ফুটবল খেলে মঙ্গলবার এর ম্যাথ সিটির জন্যে মাগরিবের পর পড়তে বসি । আনুমানিক ১০ঃ৩০ এর দিকে ঘুম দেই । হঠাৎ ১২ টার দিকে ১২ ব্যাচ এর দেবদ্যুতি সরকার সাবেক ছাত্রলীগ হল সভাপতি), আনিস ও ১৩ ব্যাচের অন্তর দরজায় নক দেয়, রুম ৫০০৬ । আমার রুম্মােট দরজা খুললে দেবদ্যুতি বলে, শোভন কে? তারপর আমার কাছে এসে ঘুম থেকে উঠায়ে খুব ভদ্রভাবে ফোনসহ আমাকে রুম থেকে নিচে ফোয়ারায় নিয়ে যায় । যাওয়ার আগে অন্তর কে আমার ব্যাগ ও সমস্ত আসবাবপত্র সার্চ করতে বলে, যে 'শিবির' সম্পর্কিত কোন কিছু পাওয়া যায় কি না । কিছুই না পেয়ে চলে যায় । এদিকে ফোয়ারায় ১২ এর আকাশ দেবনাথ সহ ১৩ ও ১৪ ব্যাচের কয়েকজন যোগ দেয় । আমাকে জিষ্ণাসাবাদ করে, আমি শিবির করি কি না । আমি বললাম, 'না' ।

তারপর আমার ফেসবুকের Liked পেজ থেকে দেখায়, আমি বাঁশেরকেল্লা, হেফাজতে ইসলাম এই পেজগুলাতে like দিয়েছি । তারপর তারা বলে, "এই তুই তো শিবির করস । বুয়েটের সেক্রেটারির হলে শিবির!!!"

তারপর আমাকে ১০০৭/১০১০ নম্বর রুমে কলার ধরে নিয়ে যায় । এরপর শুরু করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও চড়-থাপ্পড় । আমার মাথা ও কান ঝনঝন করা শুরু করে । আর বলতে থাকে, "বল, তুই শিবির করস?" আমি ওই কন্ডিশনেই প্রতিবাদ করে যাই । যত বলি করি না, ততই চড়ের তীব্রতা বাড়ে । কিছুক্ষণ পর স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো শুরু করে । আর বলতে থাকে, "বল, তুই শিবির করস, বুয়েটের শিবির গুলোর সব নাম বল"। একসময় স্ট্যাম্প ভেঙে যায় । আমি এরপরও স্বীকার করি না । তখন কেউ একজন বলে, "এত মার খাইয়াও স্বীকার করে না! এই ব্যাডা তো ট্রেইনড"। এরপর হঠাৎ নির্যাতন বন্ধ করে, আনিস খুব 'দরদ' কণ্ঠে বলে, "তুই শুধু স্বীকার কর, তাইলে আর সমস্যা নাই" । আমি বলি, যা করি নাই তা ক্যান স্বীকার করব? তখন আকাশ বলে, "এত মাইর খাইয়াও কথা বলার শক্তি ক্যাম্নে পাই?" তারপর আবার মাইর শুরু করে । কেউ একজন থামাইয়া এবার বলে, "এই পাতায় লেখে দে যে তুই শিবির করস, কেউ কিচ্ছু করবে না আর, কথা দিলাম"। তাদের কথায় বিশ্বাস করে লিখলাম । এরপর সবাই আমাকে রুম থেকে বের করে গার্ডদের সামনে দিয়া তিতুমীর-জিমনেসিয়াম এর চিপায় নিয়ে গেল । সেখানে দেখি ২০-৩০ এর জনের গ্যাদারিং, আর সবাই কয়েকজনকে পেটাচ্ছে । আমি ভাবতেসি আমাকে এখানে নিয়ে আসল ক্যান, আমাকে না ছেড়ে দেবার কথা? সেখানে ছিল তিতুমীর ১১ এর সাকিব ও অন্যান্য হলের আরও অনেকে । অনেক আগের হওয়ায় সবার নাম ও ফেইসও মনে নাই। এরপরে যা ঘটল আমি জাস্ট আল্লাহর কাছে চাইতেসিলাম, আল্লাহ আমারে দয়া করে জান্নাত নসিব কইর, আর আমার ফ্যামিলি যাতে এই কষ্টটা সহ্য করতে পারে, আর এই জালিমদের ধ্বংস কইর । দুইজন পেছন থেকে ধরে থাকে যাতে না পড়ি, আর দেবদ্যুতি ও শেরে এ বাংলা ১৩ এর একজন পালাক্রমে সর্বশক্তি দিয়া চড় মারতে থাকে । এরপর দেবদ্যুতি, আকাশ, আর আনিস আমাকে উপুড় করে মাটিতে ফেলে পায়ের ওপর স্টাম্প দিয়ে মারতে থাকে, আরেকজন আমার হাত বরাবর ক্রমাগত লাত্থাইতে থাকে। আমাকে বলতে থাকে, "তুই নিশ্চয় শিবিরের হল সভাপতি"। কারণ তাদের কাছে মাফ ও মুখ দিয়া স্বীকারোক্তি দেই নি বলে । আমার কথা বলার, আর দাড়াবার যতটুকুও শক্তি ছিল, সব শেষ হয়ে যায় । চোখের সামনে শুধু আম্মার চেহারা ফুটছিল, আর আল্লাহর কাছে শহীদী মৃত্যু কামনা করছিলাম। আমাকে এবার তিন জনে উঠাইয়া নিয়া জিমনেসিয়াম এর দেয়াল এ ঠেস দিয়া রাখে। আর আমাকে জিজ্ঞাসা করে চলে, আমি কাওকে(শিবির) চিনি কি না । ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিলাম মাটির দিকে । কিছুক্ষণ পর মাথা নাড়িয়ে 'না' বুঝালাম । সকাল হওয়ার পর বলে, এ তো হাটতেও পারবে না মেবি । এরপরও স্ট্যাম্প দিয়া কয়েকটা বাড়ি দিয়া পিছনে না তাকিয়ে হল এ যেতে বলে । প্রায় ৬ ঘণ্টা যাবত তারা আমার ওপর স্ট্যাপ্প আর থাপ্পড়ের অত্যাচার চালায় ।

প্রায় তিন সপ্তাহ খোড়ায়ে হাটসি । আমার কোমরের নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত দুই পায়ে ঘন কালশিটে পড়ে যায় । ভয়ে কাউকে বলতে পারি নি । শুধু আমার রুমমেট ও ওই জানোয়ার গুলা ছাড়া এই ঘটনা কেউ জানত না। কালক্রমে অনেকেই জানতে পারে । পরে ক্রমে জানতে পারি, শুধু আমার সাথে না, এটা ওদের দৈনন্দিন রুটিন । যখন যাকে ইচছা, এইভাবে অ্যাকশন নিত । আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাই নি বলে, আমার হলে থাকার সুযোগ হয়েছিল । দেবদ্যুতি হুমকি দিয়া বলে, "আমার ছেলেপেলে তোর ওপর সর্বদা নজরদারি করবে" ।

ভয়ে আমি এতটাই তটস্থ থাকতাম, কখনও কাউকে জানানোর চেষ্টা করি নি, কারণ আমি বিশ্বাস করতাম, এর কোন বিচার নেই। আবরার এর মৃত্যুর পরে প্রথম বারের মত বিবেকের দংশন আমার ভয়ের ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়েছে । তাই শেয়ার করলাম ।

জানি না, আবরার আমার চেয়ে বেশি মার খেয়েছে কি না, কিন্তু অবশ্যই ও আমার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে বলেই মারা গেছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসীদের অত্যাচার/নির্যাতনের জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে। (১৬ব্যাচের এক ছোট ভাইর়ের কাছ থেকে,ওর কথা গুলোই হুবহু দিলাম এখানে)

সেদিন ছিলো '১২ ব্যাচের নেইম ডে। রাতে মিনারের কনসার্ট ছিলো।

জুনিয়র- মোস্ট হিসেবে ছিলাম আমরা, ' ১৬ ব্যাচ। এরকম ফেস্টগুলাতে মোস্ট জুনিয়র ব্যাচ সবচেয়ে বেশি কামলা কাজের খাটুনি খাটে এটা সবারই জানা। তাছাড়া নিজেদের ভার্সিটি লাইফের প্রথম প্রোগ্রাম। সবাই সারাদিন কাজ করে টায়ার্ড। তাও আমাদের ১৫/২০ জন ছিলাম কনসার্টে। তবে এক্ষেত্রে বলা উচিত না তা-ও বলি, সিনিয়র ভাইয়েরা সব মিলায়ে ১০ জন ও ছিলেন না। অডি পুরো ফাঁকা।

প্রোগ্রাম শেষে খবর পাই আমাদের ১৬ এর সবাইকে রাতে "রশীদের মাজারে" উঠতে ইবে। তবে রশীদের পরিবর্তে পরে ঠিক হয় সোহরাওয়ার্দীর ছাদে উঠানো হবে। সবাই আমরা একেক হল থেকে সোহরাওয়ার্দীর গণরুমে জড়ো হই।

সেই রাতে ভার্সিটিতে প্রথমবারের মতো আসা আমাদের সবার কি অবস্থা ছিলো, সে রাতের ভয়াবহতা লিখার ভাষা আমাদের নাই ।

এরপর সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয় ৫-৬ জনের ছোটো-ছোটো গ্রুপে করে সোহরাওয়ার্দীর ছাদে উঠতে। উঠার পরেই দেখি ১২ ব্যাচের নাফিজ ইমতিয়াজ ভাই বসে আছে ১৫ ব্যাচের কভ়েকজনকে নিয়ে। রীতিমতো মারমুখী আচরণ এবং অল্লীল অসভ্য সব বাবা-মা তুলে গালিগালাজ

তার নির্দেশেই নাকি ওইদিন রাতে '১৬ এর সবাইকে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে উঠায় '১৫ এর ভায়েরা(যদিও এটা শোনা কথা)

সবাইকে এনে লাইন করে দাঁড়ায়ে মোবাইল অফ করায়ে সামনে রাখতে বলে '১৫ এর ভাইরা। সবার আগে টর্চার শুরু করে নাফিজ ইমতিয়াজ ভাই নিজেই। দুই গালেই থাপ্পর দেয় '১৬ এর শিপন ও রিদুয়ানকে। এবং আইডিয়ালের স্যার দেখে ওদের গায়ে হাত তোলা নাকি উনার জাস্টিফাইড।

তারপর একে একে শুরু করে '১৫ ব্যাচের ভাই সবাই।

{(লিখন, দীপু, বন্ধন, জাওয়াদ, তানভীর) ভাই} সবাই শুরু করে গালিগালাজ।

'১৬ এর রাম কে এত চোরে থাপ্পর দেয় বন্ধন ভাই যে ও কানে হাত দিয়ে মাটিতে শুয়ে পরে। এদিকে লিখন ভাই, দীপ্ত ভাই উনারা ক্রমাগত থাপ্পর দিচ্ছে রিদোয়ান সৌপ্তিক এদের। সবচেয়ে থাপ্পর ওই দিন খায় রিদোয়ান।

দীপ্ত ভাই স্টাম্প দিয়ে পিটায় রিদোয়ান কে।

ওর দোষ ছিলো ও হাফ-ওয়াল নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিসিলো। সৌপ্তিককে থাপ্পর দেয় কারণ ও কমেন্ট করসিলো ওই পোস্টে।

এগুলা কেমন ঘৃণ্য কাজ এটা বাদবাকি ব্যাচের ভাইয়াদের বিবেচনা।আপনাদের বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম। আপনারা নিজেদের আমাদের সে জায়গায় বসিয়ে কল্পনা করুন-মাত্র "স্বপ্নের" বুয়েটে আসা ছেলেগুলার মানসিক অবস্থা নিয়ে।

রিদোয়ান, সৌপ্তিক, রামকৃষ্ণ-এদের চড় থাপ্পড় আপনারা শারীরিক ক্ষত দেখে মাপতে গারবেন। কিন্তু আমাদের এতোগুলা ছেলের মনের অবস্থাটা অন্তত বোঝার চেষ্টা করুন।

এর আগের পুরনো ব্যাপার- যেখানে অভিযোগ করা হয় আবরার আর রিদোয়ান বাথরুমে নাচতেসিলো- যেটা দেখে ১৪ এর ভাইয়েরা লজ্জায় মুখ লুকাতে পারতেসে না দেখে ১৫ এর ভাইদের কমপ্লেইন করসেন। এটা বলে আরেক দফা থাপ্পর দেয় লিখন ভাই আর তানভীর ভাই।

রনিকে পিটানো হয় কারণ ও কনসার্ট এর টাইমে ফেবু তে এক্টিভ ছিলো। এছাড়া লিখন ভাই রনি কে এত জোরে থাপ্পর দেয় রনির কানে লাগলে ওর পর্দা ফেটে যেতো। '১৫

এর সৌমিক চৌধুরী ভাই আর তানভির রহমান ভাই রনিকে মুরগি বানায়ে পুরো হলের ছাদ ঘুরাইসিলো। শেষে রনি মাথা ঘুরায়ে শুয়ে পরে। লিখন ভাই পিটাইসিলো কারণ রনি রিদোয়ান এরা তার কাছে ট্রিট চাইছিলো। এভাবেই আমাদের ট্রিট দিয়েছিলেন আমাদের সিনিয়র ভাইরা।

এছাড়াও প্রিয়,ইসমাইল,তারিকুল সবাই কেই কমবেশি পিটানো হয়।

সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার- কাকে জানি থাপ্পর দিছিলো ১৫ এর জাওয়াদ জুলকারনাইন ভাই। ফল্ট ছিলো জাওয়াদ ভাই ওকে উনার নাম বলতে বলসিলো, ছেলেটা পারে নাই। একজনের নাম জানে না দেখে একটা বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া ছেলের গায়ে হাত তোলা হয়!

প্রিয়কে পুরা সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে দৌড়ানো হয় কারণ সে ক্যাম্পাসে তার প্রেমিকার সাথে কথা বলছিলো!

এছাড়া রনি,সাজন,তকি, রিয়াসাত এদের সবাইকে দিয়ে অশ্লীল অভিনয় করান নিলাদ্রী ভাই।

সাথে সরোয়ার জাহান ভাই, ফাহিম মাহমুদ ভাই, উপরে যাদের নাম লেখা সবাই ই ছিলো। বলা হয়, বেশ্যালয়ে যেভাবে একজন বেশ্যা নিজেকে তাদের খদ্দেরের কাছে উপস্থাপন করে সেভাবে আমাদের উপস্থাপন করতে হবে। আমাদের এক দলকে বানানো হয় বেশ্যা আর আরেকদলকে তার খদ্দের। জাস্ট সবাই কিভাবে মেন্টাল ট্রমায় চলে গিয়েছিলো আমরা দেখেছি। নিজেরা কোনোদিন খারাপ শব্দ বা গালিগালাজ করি নাই- এই দাবি কেউই করি না। কিন্তু এ অশ্লীলতার ভাষা আমরা জানতাম না। আমাদের মানসিক হ্যারাসমেন্টের বিচার আজকে আপনাদের সবার কাছে করে গেলাম।

পুরোটা সময় নাফিজ ইমতিয়াজ ভাই "নাটক" উপভোগ করসেন। এবং কিভাবে এক আপু নাচার সময় তার শরীরের বিবরণ দিচ্ছিলেন এবং বাকিরা সে আলোচনায় অংশগ্রহণ করছিলেন।

অনেককেই কান ধরে এক-দুই ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো।

ফজরের আজান পর্যন্ত চলে এই অত্যাচার।

রনি তার বোনের সাথে থাকে। নাফিজ ইমতিয়াজ ভাই রনির আপু-দুলাভাই কে নিয়েও বাজে মন্তব্য করছিলেন।

এনারাই আবার পোস্ট দিচ্ছে এখন আবরার হত্যা নিয়ে।

অনেক প্রিয় ভাই ছিলো ওইদিন ওখানে- সবাই দেখলো কেউ কিছু বললো না।

তারাও সমান অপরাধী জুনিয়র দের কাছে। আর নাফিজ ইমতিয়াজ ভাইয়ের কথা বাদ- ই দিলাম।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

১. উপরে নাম লেখা সবার সাথেই আমাদের কথা হয়। অনেকেই হয়তো মজার জন্যেই অথবা পরিস্থিতির চাপে উক্ত ঘটনায় অংশ নিয়েছেন। কারো উপরেই আমাদের ক্ষোভ নাই। শুধুমাত্র সে রাতের কথা আমার মনে হয় এসময় সবার জানার অধিকার আছে-একারনেই জানানো। কারণ এরকম দুঃসময়ে পুরনো পাপে অংশ নেয়া কেউ যেনো নিজেদের সাধু দেখাতে না পারে।

২. আর ১৭ এর কারো যদি মনে ১৬ এর করা কোন কাজ নিয়ে নিজেদের মনে কষ্ট থেকে থাকে, ফিল ফ্রি টু শেয়ার। তবে একটা কথা দাবি নিয়ে বলতে পারি, জুনিয়র পেটানোর মত ইীন চিন্তা করি নাই, হতে দেইও নাই। প্রশ্ন থাকতে পারে কেন এসব এখন বলা হচ্ছে। ব্যাচের পর ব্যাচ সিনিয়র জুনিয়র বন্ডিং তৈরির নামে যে র‍্যাগের কালচার তৈরি করা হয়েছে, জুনিয়রদের পেটানো, ভরা ক্লাশ রুমে গালাগালি করে সো কল্ড "ম্যানার" শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, জুনিয়রদের বলছি, ট্রাস্ট আস, এসবে আসলে দূরত্ব তৈরি হয় শুধু। ওইদিনের রাতের ঘটনার জন্যে ব্যাচের অনেকেই আমাদের সিনিয়রদের জাজ করি।

১৮। দুই ভাইয়ের র‍্যাগিং কাহিনী

আসমান(ছদ্মনাম) বুয়েটে এসে পোশ্কাকি ভাইয়ের স্পর্শে ভাবলো,'যা শালা। পলিটিক্সে তো বেশ চাম! খানাপিনা, মজমস্তি, মারতে পারে, গাঞ্জা-বাবা,বারে যাওয়া সব ফ্রি!' অ্যাই শালার লাইফ!

তিতুমীরে আসমান বড়দের টাচে ধীরে ধীরে নষ্ট আসমানে পরিণত হলো,সাথে জুটলো ডিটুবিটু(ছদ্মনাম)।অল্পকয়দিরেই ডিটু-বিটুর বেস্ট র‍্যাগারের সুখ্যাতি ছড়িয়ে গেল, প্রায়ই ডিটু-বিটু এই হল সেই হলে র‍্যাগ দেয়ার জন্য খেপ মারে। আউলায় ডলার (ছদ্মনাম)এর রুমে যতবার র‍্যাগ হইছে, ডিটু বিটু উপস্থিত ছিল, লাহিড়ী যে কান ফাটিয়ে দিয়েছিল সেটা শুনার পর এরা বলছিল, 'জুনিয়রদের এত সাহস কই কি করে এই ঘটনা ফ্লাশ করার? ওর আরেকটা কান ফাটায়ে দেয় দরকার ছিল!' সেদিন আহসান উল্লাহ হলের ইট সুড়কি ডুকরে কেঁদেছিল।

যেটা বলছিলাম,ডিটু-বিটুর কথা। ওদের বেস্ট র‍্যাগার বলা হয় যে কারণে

১) ওরা ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটানিটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিযয়েছিল।শরীরের কোথায় আঘাত করলে কাউকে নির্যাতিত ছাত্ররা দেখাতে পারবে না, সেটা জানতো তারা।তিতুমীরের ছাদে কেবল আঘাতের চিহ্ন!

২) র‍্যাগিং এ অশ্লীলতা আর কামুকতা নিয়ে আসছিল। যেই কারণে অধিকাংশ নির্যাতিতরা কাউকেই বলতে পারেনি কিভাবে র‍্যাগ দেয়া হয়েছিল।

৩) র‍্যাগিং দেয়ার সময় নির্যাতিতদের কাছে ভিসি-ডিএসডব্লুর নাম এমনভাবে বলেছে যে এরা তাদের বন্ধু!

৪) এসব অপকর্ম করার শক্ত বুনিয়াদ ছিল তাদের রাজনৈতিক পরিচয়,যেটা তারা সবসময় ভাবতো এই পরিচয়টাই অনেক বড় কিছু।

এখন আপনি কল্পনা করতে পারছেন র‍্যাগিং এর নামে কি কি হতো?

জানি,আপনার কল্পনাশক্তিতেও ঢুকছে না তা। Muhammad Abir

01 August 2019

১৮। বুয়েটের র‍্যাগারদের পাশবিকতা

বুয়েটের মেকানিক্যাল ১৭ ব্যাচের ছাত্র সৌমিত্র লাহিড়ী, ১৮ ব্যাচের এক ছাত্রকে থাপ্পড় দিয়ে কানের টিম্পানিক মেমব্রেন ফাটিয়ে দিয়েছে। এটি ফেটে গেলে মানুষ শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। এটি ফেটে গেলে আপনার কান সংক্রমন বা আঘাতের জন্য দুর্বল হয়ে পরে। অনেক সময় এটি ছিদ্র হলে আপনাআপনি ভাল হয় কিন্ত ফেটে গেলে বা অবস্থা খারাপ হলে রোগী সারাজীবনের জন্য ভালভাবে শুনতে পায় না (Permanent Hearing Loss)। এরকম একটা Criminal Offense করে আমরা এখনও বসে আছি কবে ডিএসডব্লিউ সৌমিত্রকে শাস্তি দিবে সেই আশায়। সবার আগে উচিত এই ছেলেকে ধরে পুলিশে দেয়া এবং তার নামে মামলা করা। শুধু যে ছেলেটার এমন হয়েছে শুধু সে এবং তার পরিবার জানে তারা কেমন সময় পার করছে, আর আমরা আছি আড়িপাতা গরম করে ২ দিন পর আবার ভুলে গিয়ে নতুন কাউকে র‍্যাগ দেয়ার সুযোগ করে দিতে। এইসব মানুষরূপী জানোয়ারদের আমরা এখনও পুলিশে দেই নাই কেন সেটাই বুঝতে পারছি না।